সম্পাদকীয়

অপারেশন জেল! বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’কে ভাঙতে গ্রেফতারি শুরু? নামছে ইডি-সিবিআই

এবার অপারেশন জেল! ‘ইন্ডিয়া’-আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মিশন ভারত’ চলছেই। কিন্তু তাতে বিরোধী মহাজোটকে দমানো যাচ্ছে না। তাই ‘ইন্ডিয়া’ ভাঙতে নতুন করে কোমর বেঁধে ঝাঁপাচ্ছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আর একাজে তাদের হাতিয়ার সেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিই। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে তদন্তপর্ব চলছে কিংবা চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে, এরকম দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত বিরোধী নেতানেত্রীদের টার্গেট করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), সিবিআই এবং আয়কর দপ্তর। চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকেই শুরু হতে পারে গ্রেপ্তারি পর্ব। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের অন্দরে অন্তত তেমনই জল্পনা চরমে। এমনকী গ্রেপ্তারির তালিকায় বিরোধীশাসিত কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম থাকাও অসম্ভব নয় বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি কি ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন? নাকি ছত্তিশগড়ের ভূপেশ বাঘেল? কয়লা এবং খনি লিজ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় বিদ্ধ দুই মুখ্যমন্ত্রীই। সম্প্রতি দিল্লি এসে কংগ্রেসের বাঘেল বলে গিয়েছেন, ‘সাহস থাকলে আমাকে গ্রেফতারি করুক মোদি সরকার।’ আবার ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো হেমন্তের সচিবালয় এবং বাসভবনে একাধিকবার চলেছে তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ। দু’জনেরই ঘনিষ্ঠ আধিকারিকদের ইতিমধ্যে গ্রেফতারি করেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তাই স্বাভাবিকভাবে তাঁদের গ্রেপ্তারি নিয়ে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে কান পাতলেই। যদিও ইডি-সিবিআইয়ের টার্গেটে আছে আরও নাম। তাঁদের মধ্যে অন্যতম তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। বেছে বেছে ইন্ডিয়া জোটের বিশেষ কমিটির বৈঠকের দিনেই অর্থাৎ, আগামী কাল অভিষেককে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি। তেজস্বী যাদবের নাম জমির বিনিময়ে রেলে চাকরি দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করেছে সিবিআই। যে কোনও সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে আশঙ্কায় আরজেডি শিবিরে। আবার যে আবগারি দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিশোদিয়া, সেই একই মামলায় তেলেঙ্গানার বিআরএস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তামিলনাড়ুতে এক মন্ত্রী ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। শাসকদল ডিএমকের আরও অন্তত দু’জন পদস্থ নেতামন্ত্রীর বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এমনকী এত বছর পর হঠাৎ অন্ধ্রপ্রদেশের জগন্মোহন রেড্ডি সরকারের সিআইডি দুর্নীতি মামলায় চন্দ্রবাবু নাইডুকে গ্রেপ্তার করায় উঠে গিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্ন। মোদি সরকারকে না জানিয়ে এত বড় পদক্ষেপ নেবেন জগন্মোহন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? চন্দ্রবাবুর এনডিএতে যোগ দেওয়া নিয়ে জোর জল্পনা চলছে। তা সত্ত্বেও কয়েকমাস ধরে টালবাহানা করছেন তিনি। তাই কি পরোক্ষে তাঁকে শিক্ষা দিল বিজেপি? তিনি তো ইন্ডিয়া মহাজোটেও নেই! অর্থাৎ এনডিএতে না এলে যে কোনও দলই টার্গেট হতে পারে বার্তা দেওয়া হচ্ছে? গত মার্চেই সুপ্রিম কোর্টে ১৪টি রাজনৈতিক দল জানিয়েছিল, বিগত বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি যত মামলা দায়ের করেছে, তার ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই টার্গেট বিরোধীরা। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ইন্ডিয়া জোটকে মোদি সরকার এত ভয় পাচ্ছে কেন? একঝাঁক রাজ্যে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসছে। আর তারপরই লোকসভা নির্বাচনের ডঙ্কা বাজবে। তার আগে সরকারি সূত্রের খবর, এক অথবা একাধিক চার্জশিট জমা পড়েছে যাঁদের বিরুদ্ধে, এমন অভিযুক্ত নেতাদের সবার আগে গ্রেপ্তার করা হবে। লক্ষ্য কি তবে ইন্ডিয়া জোট ছত্রভঙ্গ করা?