আজকের মত নারদ মামলার শুনানি শেষ। আগামী বুধবার ফের শুনানি হবে বলে জানাল কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। অর্থাত্ আগামী বুধবার পর্যন্ত নারদকাণ্ডে ধৃত চার নেতার ভাগ্য ঝুলে রইল। সিবিআইয়ের পকষ থেকে এদিন অবশ্য শুনানি শুরুর আগেই আর্জি জানানো হয়েছিল, বুধবার পর্যন্ত শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ করে দেয় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। নারদ মামলা নিয়ে বারবার কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচ বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়ল সিবিআই। এদিন নারদ মামলার পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানিতে কার্যত প্রশ্নের মুখে পড়ছে সিবিআই-এর ভূমিকা। গতকাল রাতেই সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার বৃহত্তর বেঞ্চের শুনানির স্থগিতাদেশ ও গৃহবন্দির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যায়। যার জেরে আজ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতিদের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। আজ শুনানির শুরুতেই সিবিআই-এর হয়ে লড়াই করা সলিসিটার জেনারেল আর্জি জানান যাতে আগামী বুধবার পর্যন্ত মামলা স্থগিত রাখা হয়। এই আর্জিতে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, সুপ্রিম কোর্ট এখনও মামলা গ্রহণ করেনি। সেক্ষেত্রে হাইকোর্টে শুনানি হলে আপত্তি কোথায়? বিচারপতিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ আসতে পারে তাই দ্রুত শুনানির কাজ শেষ করতে হবে। সিবিআই-এর এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ছোঁড়েন নারদ মামলায় অভিযুক্তদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তিনি জানান, খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সিবিআই ইচ্ছে করে মামলাটি বিলম্বিত করছে।’ এদিন বেলা ১১ টাতে নারদ মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শুরু হলে প্রথমেই ধাক্কা খায় সিবিআই। তাদের আবেদন খারিজ করে চলছে শুনানি। এছাড়াও এদিন সিবিআই-এর আইনজীবিকে বারবার একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন করে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। কেন ওই নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল? বিচারপতি আই পি মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সিবিআই- কখনই নেতাদের গ্রেফতার করেনি। তখনই নারদ মামলায় অভিযুক্তদের হয়ে আইনজীবি অভিষেক মনু সিংভি যুক্তি দেন, ‘৪০৭ ধারা ব্যবহার করে আগেই জামিন পাওয়া চার নেতা-মন্ত্রীর জামিনে কি স্থগিতাদেশ দেওয়া যায়? জামিনে স্থগিতাদেশ দিলেও অভিযুক্তদের কথা শোনা হয়নি কেন? এতে সুবিচার পাওয়া যাবে? জামিনের যে আদেশ দেওয়া হয়েছিল তার প্রাথমিকতার বিচার করলে একটা বিষয় স্পষ্ট, তা হল এই জামিনের নির্দেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আসেনি। যার ফলে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হতে হয়েছে অভিযুক্তদের। সিবিআই যা যা ইস্যু আদালতকে জানিয়েছে, তার ৯৫ শতাংশ ভিত্তিহীন। সিবিআইয়ের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, যদি আজ আমাদের সিবিআইয়ের অধীনে থাকতে হত তবে মার্শাল আইন জারি হত পশ্চিমবঙ্গের এই রাজধানী কলকাতায়।’ কার্যত আইন নিয়ে সিবিআইকে একপ্রস্থ শিক্ষার পাঠ আদালতেই পড়িয়ে দিলেন আইনজীবি অভিষেক মনু সিংভি।
এদিন সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে একাধিক বিষয়ে আদালতের বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, শোভন চ্যাটার্জী ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের হয়ে লড়াই করা অভিষেক মনু সিংভি। তিনি সিবিআই-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করে গ্রেফতারি নিয়ে জানান, ‘কেন রাজ্যপালের অনুমতি নিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে? অধ্যক্ষের অনুমতি কেন চাওয়া হয়নি? আমার মতে এটা আসলে গণতন্ত্রের গ্রেফতার। কারণ গণতন্ত্রে অনুমোদিত প্রক্রিয়ায় এই গ্রেফতারি হয়নি।’ সিংভির প্রশ্নে পাল্টা জবাব দেন তুষার মেহতা, তিনি জানান, ‘এই বক্তব্য কি আদৌ মূল ইস্যুর সঙ্গে জড়িত? আমরা মনে হয় মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি। আমি আর এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’ পাল্টা জবাবে সিংভি জানান, ‘আমি মূল বিষয়েই রয়েছি।’ এদিন আদালতে নিজাম প্যালেসের বাইরে বিক্ষোভ নিয়ে বিচারপতিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সলিসিটার জেনারেল। যদিও তার পাল্টা সিংভি জানান, ‘বলা হচ্ছে পরিস্থিতির জন্য অভিযুক্তদের ভার্চুয়াল মাধ্যমে নিম্ন আদালতে শুনানি করতে হয়েছে। সেখানে ওই আদালতের বিচারপতি কী কোনও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বা বিরোধীরা করেছেন? যদি না করে থাকেন তাহলে কেন অভিযুক্তদের সশরীরে না আনাকেই যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে।’ এদিন আদালতে বিচারপতিদের প্রশ্নে সিবিআই-এর গ্রেফতারি নিয়ে চুপ থাকেন তুষার মেহতা।