জেলা

রাতভর ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের উপকূল এলাকা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা, মৃত ৫

ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়েছিল বাড়ির কলাগাছ৷ সেই কলা গাছ কেটে সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেন বাবা৷ আর তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে একই পরিণতি হল ছেলেরও৷ সোমবার সকালে এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে৷ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবা এবং ছেলে, দু জনেরই মৃত্যু হয়েছে৷ এই নিয়ে ঘূর্ণিঝড় রিমলের জেরে শুরু হওয়া দুর্যোগে রাজ্যে চার জনের মৃত্যু হল৷ সোমবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে মেমারির কলানবগ্রাম কোঙারপাড়ায়। জানা গিয়েছে, মৃত দুজনের নাম ফঁড়ে সিং(৬৪) এবং তাঁর ছেলেও তরুণ সিং(৩০)। স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবারের ঝড়বৃষ্টিতে বাড়ির কলা গাছ ভেঙে পড়ায় এ দিন সকালে সেই গাছ কেটে সরাতে যান ফঁড়ে সিং৷ কিন্তু গাছের সঙ্গে যে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে ছিল, তা লক্ষ্য করেননি তিনি৷ গাছ কাটতে যেতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ওই বৃদ্ধ৷ বাবাকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে দেখে তাঁকে বাঁচাতে যান ছেলে তরুণ সিং৷ কিন্তু তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন৷ স্থানীয় বাসিন্দারা বাবা ছেলেকে উদ্ধার করে প্রথমে বড়শুল হাসপাতালে নিয়ে যান৷ সেখান থেকে তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ কিন্তু সেখানে তাঁদের দু জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে৷ অন্যদিকে সুখচর এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। গোপাল বর্মন নামে বছর ৩০-এর ওই যুবক রাস্তার ধারে শৌচকর্ম করতে গিয়েছিল। আর সেই সময়েই বিদ্যুতে তার পড়েছিল জলে। তার থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল ওই যুবকের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে এসেছে খড়দহ থানার পুলিশ। রবিবার রাতেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কলকাতার এন্টালির বিবির বাগান এলাকায় বাড়ির কার্নিশ ভেঙে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়৷ সোমবার সকালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মৌসুনি দ্বীপে বাড়ির রান্নাঘরের উপরে গাছ পড়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধার৷ সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের জেরে চলতে থাকা দুর্যোগে রাজ্যে ৫ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে৷ সারা রাত তাণ্ডব চালিয়েছে রিমল।   ঘূর্ণিঝড় রিমলের দাপটে উত্তর চব্বিশ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাগর, নামখানার মতো এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে৷ রাত থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল রোষ এবং মুষলধারায় বৃষ্টিতে আতঙ্কের প্রহর গুনেছেন ওই এলাকার মানুষ৷ অনেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন৷ অসংখ্য জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে৷ হিঙ্গলগঞ্জ, সাগর দ্বীপে মাটরি কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে, উড়ে গিয়েছে টিনের চাল৷ ক্ষতি হয়েছে পানের বরজেরও৷ বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে বহু এলাকা৷ সাগরের চারদিকে যার ছাপ স্পষ্ট। উপড়ে পড়েছে গাছ। উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। যুদ্ধকালীন তত্পরতায় দুর্গত এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টায় এনডিআরএফ।  গাছ পড়ে, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বন্ধ রাস্তা। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে রাস্তা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত এখন এনডিআরএফ। রাত থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে কাজ।