সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তির আগে অর্থাৎ চড়ক উৎসবের আগের দিন নীলপুজো পালিত হয়। এই বছর ১৩ এপ্রিল অর্থাৎ ২৯ চৈত্র পড়েছে নীলপুজোর তারিখ। আজ নীলষষ্ঠী উপলক্ষে দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, আদ্যাপীঠ সহ শহরের শিবমন্দিরগুলিতে বিশেষ পুজোপাঠের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও উত্তর কলকাতার স্বামীজির পৈতৃক ভিটে, ভূতনাথ মন্দির, জয়মিত্র কালীবাড়ি, প্রামাণিক ঘাট রোড কালীবাড়ি, আলমবাজার লোচন ঘোষের ঘাটের শিবমন্দির, কাঁচের মন্দির শিবমন্দির, বাগবাজারে অন্নপূর্ণা মন্দির প্রভৃতি ধর্মীয় স্থানে দিনটি পালিত হবে। পুরাণ অনুযায়ী নীল বা মহাদেবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতীর বয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে উপলক্ষ্যেই এখন পালন করা নীলের ব্রত। দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন নীলধ্বজ রাজার ঘরে। এখন ঘরে ঘরে মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীলের উপোষ করেন। পাঠ করেন নীলের ব্রত। নীল – অর্থাৎ শিব- এই দিনের বাংলায় ঘরে ঘরেই মহাদেবের বিশেষ পুজো করা হয়। সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় অনেতেই বাতি জ্বালেন।
নীল পুজোর কাহিনী-
পুরাণ অনুযায়ী নীল বা মহাদেবের সঙ্গে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতীর বয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে উপলক্ষ্যেই এখন পালন করা নীলের ব্রত। দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিবজায়া সতী নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন নীলধ্বজ রাজার ঘরে। রাজা তাঁকে লালন পানল করেন। তারপর সুন্দরী কন্যার বিয়ে দেন শিবের সঙ্গে। নীলাবতী শিবকে মোহিত করে। পরে মক্ষিপারূক রূপে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মেয়ের দুঃখে রাজা ও রাণীও প্রাণ বিসর্জন দেন।
বর্তমানে পুজো-
স্ত্রের সকল প্রথা মেনেই শিব আর নীলাবতীর বিয়ে হয়। তবে প্রথা অনুযায়ী নিম বা বেল কাঠ দিয়েই তৈরি হয় শিবের মূর্তি। চৈত্র সংক্রান্তির দিনেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। দেবতাদের পাশাপাশি ভূত প্রেতদেরও এই বিয়েতে আমন্ত্রণ জানান হয়।
শিবের সঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো –
এটাতো গেল প্রাচীন রীতি। কিন্তু নীলের এই ব্রত চালু হয়েছিল অনেক পরে। প্রাচীন গাথা অনুযায়ী, এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণীর কোনও সন্তান ছিল না। যে সন্তানই জন্মাত সে কিছুদিন পরেই মারা যেত। তাই ব্রাহ্মণ দম্পতি সংসারের মায়া ত্যাগ করে তীর্থ ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েছিল। তাঁরা ঘুরতে ঘুরতে সরযূর তীরে এসে উপস্থিত হয়। সেখানেই তাঁরা জীবন দেওয়ার সংকল্প করেন। তারপর তাঁরা নদীতে নামতে শুরু করে। সেই সময় মা ষষ্ঠী বৃদ্ধের বেশ ধারণ করে তাঁদের সামনে এসে উপস্থিত হন। আত্মহত্যার কারণ জাননে চান। তখন ব্রাহ্মণ সন্তানের মৃত্যুর কথা খুলে বলেন। সেই সময়ই বৃদ্ধা তাঁদের সন্তান বাচানোর জন্য চৈত্র সংক্রান্তিতে নীল পুজো করার পরামর্শ দেন। তিনি তাঁদের বলেছিলেন উপোস করে শিবের কাছে বাতি জ্বালিয়ে তাঁকে স্মরণ করে জল খেতে। সেই প্রথা অনুযায়ী এখনও নীলের পুজোয় সকলে বাতি জ্বালেন। সন্তানের মঙ্গল কামনা করেই এই বিশেষ দিনে পুজো করা হয়।