সব জল্পনার অবসান। বিধায়ক পদ ছাড়লেন নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। এই নবনির্বাচিত ২ বিধায়ককে নিয়ে জল্পনা চলছিল। তবে তাঁদের তরফে স্পষ্ট জানানো হল বিধায়ক হিসাবে বিধানসভায় যেতে চান না তাঁরা। সাংসদ পদেই থাকবেন নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। যার ফলে দিনহাটা ও শান্তিপুর এই দুই আসন বিধায়ক শূন্য হল। বিজেপি সূত্রে খবর, তাদের দুজনকে যে কোনও একটি পদ বেছে নিতে বলা হয়েছিল। দেখার বিষয় হল, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। যার ফলে বিধায়ক পদ ধরে রাখারও তেমন কোনও যুক্তি নেই বলেই মনে করছেন দুই সাংসদ। তার জায়গায় সংসদে তাঁরা নিজেদের গুরুত্ব ও বাংলার হয়ে কথা বলবেন বলে তাদের তরফে জানানো হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে লোকসভার মোট চার সাংসদকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। বাবুল ও লকেট ভোটে হারায় তাঁদেরকেও সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হচ্চে না। কিন্তু ভোটে জয়ী হয়েছিলেন নিশীথ ও জগন্নাথ। তাই তাঁদের হয় বিধায়ক নতুবা সাংসদ পদ ধরে রেখে অন্যটি ছেড়ে দিতে হত। এবার তাঁরা সেটাই করতে চলেছেন। নতুন বিধানসভা গঠিত হওয়ার পরে নবনির্বাচিত বিধায়কদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসেননি নিশীথ ও জগন্নাথ। তখন রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছিল তাঁরা কেউই সাংসদ পদ ছাড়তে ইচ্ছুক নন। কেননা বিধায়ক অপেক্ষা সাংসদ পদে বেশি আর্থিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়া যায়। সামগ্রিক ভাবে জেলা বা মহকুমার ওপর দলের লাগাম ধরে রাখা যায়। তাই নিশীথ ও জগন্নাথ তা ছাড়তে নারাজ ছিলেন। কিন্তু বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছিল নিশীথ ও জগন্নাথ দুইজনই বিধায়ক হিসাবেই শপথ নিয়ে বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চকে শক্তপোক্ত করে তুলুক। এর বাইরেও ছিল আলাদা হিসাব। একুশের ভোটযুদ্ধে দিনহাটা থেকে নিশীথ মাত্র ৫৭ ভোটে জয়ি হয়েছেন। আবার জগন্নাথ জয়ী হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে। নিশীথ ও জগন্নাথ বিধায়ক পদ ছেড়ে দিলে ওই দুই আসনে উপনির্বাচন হবে। কিন্তু তাতে যে বিজেপিই জয়ী হবে এমন কথা জোর দিয়ে কেউই বলতে পারবে না। কেন একে তো মূল ভোটযুদ্ধে তৃণমূল জিতেছে, তারপর এই রাজ্যে উপনির্বাচনে শাসকের পরাজয়ের নজীর খুবই কম আছে। তাই উপনির্বাচনে এই দুই আসনেই তৃণমূল জিতে যেতে পারে। কিন্তু নিশীথের কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র ও জগন্নাথের রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এবারেও এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। উপনির্বাচন হলেও বিজেপি সেখানে লড়াই করার মতো জায়গায় রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছিলেন নিশীথ ও জগন্নাথ বিধায়ক পদ ধরে রেখে সাংসদ পদ ছেড়ে দিক। তাতে ৪টি আসনই ধরে রাখা যাবে। কিন্তু গোল বেঁধেছে দুই সাংসদের কেউই সাংসদ পদ ছাড়তে রাজি না হওয়ায়। এমনকি বাজারে এই খবরও ছড়িয়ে পড়ে যে দুই সাংসদকে জোর করা হলে তাঁরা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাবেন। এই সম্ভাবনা পুরোপুরিও নাকচ করে দিতে পারেনি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তাই দুই সাংসদকেই দলে ধরে রাখতে কার্যত তাঁদের দাবির কাছেই মাথা নত করতে হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। আর তার জেরে খুব শীঘ্রই কোচবিহার জেলার দিনহাটা ও নদিয়া জেলার শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন নিশীথ প্রামাণিক ও জগন্নাথ সরকার। এর ফলে রাজ্যের শাসক দলের আসন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও অনেকটাই বেড়ে গেল। কেননা প্রার্থীদের মৃত্যু হওয়ার কারনে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করে দিয়েছিল কমিশন। সেই দুই আসনে ভোট হলে তৃণমূলের জেতার সম্ভাবনাই বেশি। আবার খড়দহে তৃণমূল জিতলেও সেখানে মারা গিয়েছে বিজয়ী প্রার্থী। সেখানেও ভোট হলে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। এর সঙ্গে যোগ হতে চলেছে দিনহাটা ও শান্তিপুর। এই দুই আসনেও শাসক দল জিতে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৫টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ভোটের কাঠি পড়েই গেল।