অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেলগ কলেজে বক্তৃতা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘মাই ব্রাদার অ্যান্ড সিস্টার’, এখানে এসে আমি সম্মানিত হয়েছি। শিকাগো ধর্মসভায় স্বামী বিবেকানন্দ ঠিক এভাবেই সম্ভাষণ করেছিলেন উপস্থিত অভ্যাগতদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই পথ অনুসরণ করলেন অক্সফোর্ডের বক্তৃতার শুরুতেই। বললেন, ছাত্ররাই ভবিষ্যৎ। কেলগ কলেজের হাউসফুল প্রেক্ষাগৃহে ‘হাইভোল্টেজ’ বক্তব্য রাখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সামাজিক উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নে বাংলা কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তা অক্সফোর্ডকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন তিনি। নিজের জীবনে লড়াইয়ের প্রসঙ্গ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, ‘ন’বছর বয়সে বাবাকে হারানোর সময় থেকে আমার লড়াই শুরু হয়েছিল। আমি বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন লড়াই করেছি। কেন্দ্রে রেল-কয়লা-নারী ও সমাজ কল্যাণ এবং ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলাম। ৩৪ বছরের সিপিএমের শাসনের পর আমরা ১৫ বছর সরকারে আছি’। তাঁর কথায় উঠে এল মা-মাটি-মানুষের প্রসঙ্গও। জানালেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছাত্র থেকে ছাত্র, কৃষক থেকে কৃষক মহিলা থেকে মহিলা সবার মধ্যে যেন সমতা থাকে। সবাইকে যেন সমান চোখে দেখা হয়। কারণ, সবাই মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব মানুষের পাশে থাকা। আমরা কন্যাশ্রী চালু করেছি ছাত্রীদের জন্য। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ছাত্রী কন্যাশ্রী পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পর তাঁরা স্মার্ট কার্ড পান। সেখান থেকে তাঁরা বিদেশে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। অর্থের অভাবে যারা পড়াশোনা করতে পারেন না তাদের জন্য আমরা আছি। ৯৯.৫% পড়ুয়ার কাছে আমরা শিক্ষা পৌঁছে দিয়েছি। এক বছরে সেটা ১০০% হয়ে যাবে। ছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্র, আদিবাসীদের জন্য প্রকল্প রয়েছে। আমাদের ছাত্ররা অত্যন্ত প্রতিভাবান। তবে তাদের স্কলারশিপ দরকার। কখনও কখনও তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে হয়। আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চালু করেছি। মহিলাদের যাতে নিজস্ব কিছু সঞ্চয় থাকে। সেটা তাঁরা নিজেদের মতে করে খরচ করতে পারবেন। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য আমাদের বাংলায় সবই বিনামূল্যে। প্রত্যেক মাসে মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হয়। তাঁরা যতদিন বেঁচে থাকবেন এই টাকা পাবেন। কৃষকরাও পেনশন পান। ‘বাংলার বাড়ি’ আমরা বিনামূল্যে দিই গরীবদের’। কোভিডের পর বিশ্বজুড়ে একটা অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তার কবলে পড়তে হয়েছিল বাংলাকেও। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনে মমতা জানান, ‘বাংলায় সব ধরনের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। অনেকে চাকরির সূত্রে চলে আসেন। বাংলায় বর্তমানে ১১ কোটি জনসংখ্যা। ভারতে অনেক রাজ্যের মধ্যে কোনোটা বড়, কোনোটা ছোট রাজ্য। গুজরাট অনেক বড় রাজ্য হলেও সেখানে জনসংখ্যা বাংলার তুলনায় অনেক কম। আমাদের রাজ্য সবাই একসঙ্গে থাকে। এই ঐক্য বজায় রাখা কঠিন কাজ’। হলে উপস্থিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় উঠে আসে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কিটস, শেক্সপিয়রের কথাও। পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের নামও শোনা যায় তাঁর মুখে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘দেশের মধ্যে বর্তমানে কলকাতা চাকরির অন্যতম বড় ক্ষেত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে, কলকাতা বর্তমানে এআই হাব, এডুকেশন হাব, হসপিটাল হাব, ডেটা সেন্টার হাব। ব্রিটিশদের সময় কলকাতা দেশের রাজধানী ছিল। এখন বাংলা দেশের সংস্কৃতির রাজধানী’।
