এখনও দায়িত্ব নেয়নি তালিবান সরকার। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক মহলকে আলোচনায় ডেকেছে তারা। সেই ডাকে সাড়া মিলবে কি না, সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। কিন্তু, তালিবদের অন্য ডাকে সাড়া মিলতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। গোটা বিশ্বের উদ্বেগ বাড়িয়ে জানা গিয়েছে, তালিবানের পতাকা হাতে নিয়ে কাবুলের বেশকিছু জায়গায় আসর জমিয়েছে বিদেশি জেহাদিরা। তাদের মধ্যে রয়েছে আইএস, লস্কর, আল কায়দা ও জইশের সদস্যরা। কাবুল দখলের তৃতীয় দিনেই আফগানিস্তানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গি সংগঠনগুলি। পাক সীমান্তবর্তী প্রদেশ থেকে দলে দলে সেদেশে ঢুকে পড়েছে লস্কর, জয়েশ এবং দাহেশ অর্থাৎ আইএস। লস্কর-ই-তোইবা এবং লস্কর-ই-জাঙ্গভির মতো জঙ্গিগোষ্ঠী কাবুলের কয়েকটি গ্রামে এবং অন্য এলাকায় চেকপোস্ট তৈরি করে ফেলেছে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-ও তালিবানের উপর প্রভাব খাটাতে মরিয়া। কারণ, লক্ষ্য তাদের একটাই—কাশ্মীর। এবার আফগান জমিন থেকে। বাংলাদেশ থেকেও বেশ কয়েকজন জেএমবি সমর্থক ভারত হয়ে পাঠানভূমিতে পা রেখেছে বলে খবর। বিষয়টি ভারতকে জানিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। গোটা পরিস্থিতিতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার তিনি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকও করেছেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশি যুবকরা পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান হয়ে আফগানিস্তানের পাকতিকায় অবস্থিত তালিবান শিবিরে পৌঁছে বলে খবর। এদের মধ্যে তিনজন হল—কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাক, সিলেটের সিব্বির আহমেদ এবং নোয়াখালির রবিউল ইসলাম। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, রাজ্জাক এবং আহমেদ চট্টগ্রাম থেকে ভায়া ত্রিপুরা হয়ে কাশ্মীরে পৌঁছয়। সেখান থেকে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিসের কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তালিবান ক্ষমতায় ফেরায় উৎসাহিত জেএমবি এবং হুজি জঙ্গিরা। পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে কমপক্ষে ১০০ জন কট্টরপন্থী যুবক ‘হিজরত’ (দেশত্যাগ) করার ছকে রয়েছে। এপারের গোয়েন্দারাও এবিষয়ে সতর্ক করেছেন বিএসএফকে। শফিকুলের দাবি, সম্প্রতি কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার তিন জেএমবি জঙ্গিও কাশ্মীর হয়ে আফগানিস্তান যাওয়ার ফিকির খুঁজছিল। কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, এই জঙ্গিদের বিষয়ে তালিবানের মনোভাবের উপরেই বিদেশি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে তাদের সম্পর্কের সমীকরণ নির্ভর করছে। এদিকে, চীন ও পাকিস্তানের পর রাশিয়া এবং ইরান তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার বার্তা দিয়েছে। তুরস্কও সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছে। আবার তালিবান ইস্যুতে আমেরিকার মতোই কঠোর মনোভাবাপন্ন ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মান। সোজা কথায় সম্পূর্ণ দ্বিধাবিভক্ত বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি। তাই আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান। কারণ, যে রাষ্ট্রগুলি তালিবান শাসনের বিরোধী, তারা আফগানিস্তান থেকে ভৌগোলিকভাবে অনেক দূরে। তাই তালিবান ইস্যুতে অবস্থান স্থির করতে এদিন সন্ধ্যায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক বসে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালরা সেখানে হাজির ছিলেন। আগামী কয়েকদিনের পরিস্থিতির দিকে নজর—এটাই এখন অবস্থান ভারতের।