পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করব। জয়নগরে কিশোরী খুনের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই দাবি করলেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশ ঢালি। এদিন তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। শনিবার পলাশ ঢালি বলেন, ‘গতকাল সন্ধে ৫টা – সাড়ে ৫টা নাগাদ মহিষমারি হাটে বাবার দোকান থেকে পড়তে বেরিয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির একটি ছাত্রী। বাবা যখন ৮টা নাগাদ বাড়ি ফিরে বাবা দেখেন মেয়ে বাড়ি ফেরেনি। তখন বাড়ির লোকেরা মহিষমারি ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ জানায়। পুলিশ দায় ঠেলাঠেলি করেছে বলে বিভিন্ন অপপ্রচার হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে যে কোনও নাবাকল বা নাবালিকা নিখোঁজ হলে নিখোঁজ ডায়েরি করা যায় না। সেক্ষেত্রে সরাসরি FIR করতে হয়। পরিবারকে সেকথা জানিয়ে জেনারেল ডায়েরি গ্রহণ করা হয়। ফাঁড়িতে FIR করার ব্যবস্থা থাকে না। তাই কিশোরীর পরিবারকে সহযোগিতা করে তাকে জয়নগরে পাঠানো হয়। কিন্তু তখনই আমরা তদন্ত শুরু করে দিই। তদন্তের সঙ্গে FIRএর কোনও যোগ নেই। কে কোথায় ছিল এই সব আমরা খতিয়ে দেখতে শুরু করি। কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা রাত ১১টা ২০ মিনিটে জয়নগর থানায় আসেন। আইসি কিশোরীর বাবার অভিযোগ শোনেন। এর মধ্যে ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত যে আধিকারিক ছিলেন তিনি আইসিকে ফোন করেন। আমরা ব্যাকগ্রাউন্ডে কে করতে পারে এই তদন্ত শুরু করে দিই। ওনারা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা রাত ১২টা ৩০ মিনিটে অপহরণের মামলা রুজু করি। কিন্তু মেয়েকে কে নিয়ে গিয়েছে তা বাবা – মা কেউ বলতে পারেননি।’ পুলিশ সুপারের দাবি, ‘এর পর আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে আমরা খোঁজ শুরু করি যে শেষ ওই মেয়েটিকে কে দেখেছিল? এটা অভিযোগ দায়েরের আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক মেয়েটির বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রেখেছিলেন। রাত ৮টা ৩০ থেকে রাত ২টো পর্যন্ত তাঁরা যোগাযোগে ছিলেন। মেয়েটির একটি বান্ধবীর সঙ্গে আমরা কথা বলি। সেই মেয়েটির দেওয়া বিবরণের ভিত্তিতে আমাদের ২ – ৩ জনকে সন্দেহ হল। এই বিবরণের ভিত্তিতে আমরা ১টি লোককে ভোর ২টোর সময় আটক করি। জেরার মুখে ও পুরো গল্পটা বলে ও স্বীকার করে যে মেয়েটিকে খুন করে কোনও একটি জায়গায় ফেলে দিয়েছে। ভোর ২টো ৪০ মিনিটে ছেলেটিকে নিয়ে আমরা সেখানে যাই ও মেয়েটির দেহ উদ্ধার করি। ২টো ৪৫ মিনিটে আমরা বাড়ির লোককে ঘটনার কথা জানাই ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ২টো ৫০ মিনিটে দেহ পদ্মেরহাট গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। আজকে তার সঙ্গে খুনের ধারা যোগ করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘৫ ঘণ্টার মধ্যে কে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়েছে সেটা আমরা চিহ্নিত করি। এটা খুব দুর্ভাগ্যের যে আমরা মেয়েটিকে এই অবস্থায় পেলাম। আমি যে টাইমলাইন দিলাম এটা সব কিন্তু অন রেকর্ড আছে। আপনারা খতিয়ে দেখতে পারেন। জেলার পুলিশ সুপার হিসাবে আমি বলছি আমি আপনাকে ফুল কনফিডেন্সে বলতে পারি। আজ সকাল পর্যন্ত আইসি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমরা পরিবারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছি। এটা একটা জঘন্য অপরাধ এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের সরকার এই সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত কড়া। আমরা দ্রুত এর তদন্ত আমরা শেষ করব। আর এর জন্য সর্বোচ্চ সাজা যে ভাবে দেওয়া যায় আমরা দেব। আমরা দ্রুত চার্জশিট করব। আর আমরা নিশ্চিত করব এই ঘটনায় যাতে মৃত্যুদণ্ড হয়।’ পুলিশ সূত্রে এও জানা যাচ্ছে, নাবালিকার বান্ধবী জানিয়েছে তার সঙ্গেই রোজ টিউশন থেকে বাড়ি ফিরত সে । ঘটনার দিন তার বাবা টিউশন পড়তে গৃহশিক্ষকের বাড়িতে দিয়ে এসেছিলেন । ফেরার সময়ে তার সঙ্গেই ফিরছিল নাবালিকা । সেই সময়ে নাবালিকার বান্ধবী একটি দোকানে কেনাকেটা করতে ঢুকলে নাবালিকা এগিয়ে যায় । বান্ধবী আরও জানায় যে, সেই সময় নির্যাতিতা তাকে ইশারা করে চলে যেতে বলে । এরপর ওই যুবকের সাইকেলে উঠে চলে যায় । এক্ষেত্রে কেন ওই নাবালিকা অভিযুক্তের সাইকেলে উঠল, তার সঙ্গে কোনও পূর্ব পরিচয় ছিল কিনা, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা ।