বাংলায় জিতলেই দিল্লিতে ঝাঁপাব, দিল্লিছাড়া করে ছাড়ব
আজ পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়ারিতে দ্বিতীয় সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নের বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ‘ভূমিপুত্র’ দিলীপ ঘোষকেও কটাক্ষ করেন। দুর্যোধন, দুঃশাসনের দলকে একটি ভোটও নয় এমন সুরও চড়ান তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, ২০১১ সালে পরিবর্তন তো তৃণমূলের স্লোগান। শুধুই টুকলি করে বিজেপি। পরিবর্তন আমাদের স্লোগান, চুরি করেছে বিজেপি। নতুন কিছু ভাবার তো ক্ষমতা নেই। নির্বাচন এলে সামনে হরি হরি আর পিছনে ডাকাতি করি। আমরা এটা করি না। আমরা বলি সামনে হরি হরি আর পিছনে মানুষকে পুজো করি। যদি বিনা পয়সায় রেশন পেতে হয়, স্বাস্থ্যসাথী পেতে হয়, বিধবা ভাতা পেতে হয় তবে একটা ভোটও বিজেপিকে নয়। যদি ১০ লক্ষ টাকার স্টুডেন্ট কার্ড পেতে হয়, মেয়েদের সম্মান পেতে হয়, ৫০০ টাকা প্রতিমাসে পেতে হয় তবে বিজেপিকে একটা ভোটও দেবেন না। তিনি বলেন, তাজপুরে গভীর বন্দর হচ্ছে। তার কাজ সম্পূর্ণ হলে খড়গপুরে সেই বন্দরের অনেক কাজ হবে। খড়গপুর আর কেশিয়াড়ি কাছাকাছি। কর্মসংস্থানের দিক থেকে অনেক সুবিধা পাবেন। ৫ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি। গরীবদের জন্য ২৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। আগামী দিনে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। ডাক্তার, নার্স এবং প্যারামেডিক্যালদের জন্য আসন সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। মেদিনীপুরে ছ’টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার হয়েছে। আরও হবে। সিপিএমকে ভোট দেবেন না। বাংলায় ওরা বিজেপির গদাই। কংগ্রেসকেও ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না। ওরা বিজেপির জগাই। বিজেপিকে ভোট দেবেন না। ওরা দাঙ্গাকারী মাধাই। জগাই-মাধাই-গদাই, তিনজনকেই দিন বিদায়। ভোটের দিন মেশিন খারাপ করে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাইবে। যাবেন না। মেশিন ঠিক হলেও ভাল করে দেখে ভোট দিতে হবে। গুন্ডারা যেন ভোট লুঠ করতে না পারে। ভোটের পর এক মাস মেশিন পাহারা দিতে হবে। ভোটটাকে সযত্নে নজরে রাখবেন। কিছু খাইয়ে ভোট লুঠ করতে পারে। ভোটবাক্স পাহারা দেওয়ার সময় কারও হাতে কিছু খাবেন না। বাইরের গুন্ডারা ভোট লুঠ করতে এলে হাতা-খুন্তি নিয়ে দৌড়ে যাবেন। তিনি বলেন, মান্না দে যে কফিহাউস নিয়ে গান গেয়েছেন, সেই কফিহাউসেও গুন্ডাগুলো বসে রয়েছে। কফিহাউসে যে ছেলেটির ছবি সামনে এসেছে, সে বহিরাগত গুন্ডা। কফি হাউস দখল করতে গিয়েছিল। ওরা জানে কফি হাউসে কারা যায়?
মেদিনীপুরের কত ছেলেমেয়ে আটকে ছিল লকডাউনে। আমি মুম্বইয়ে টাকা পাঠিয়েছি। রাজস্থানে বাস পাঠিয়েছি। সকলকে নিয়ে এসেছি। আপনারা দেখেছেন বাচ্চাকে বাক্সে শুইয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মা। এদের কোনও মায়া-দয়া নেই। এরা স্বৈরাচারী, দুরাচারী, রাবণের দল। এরা শুধু গিলতে এসেছে। মুখে হরি হরি আর পিছনে চুরি করি, এই হল বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে দিই। দিদি আপনাদের সব পুজো দেখে দেবে। কিন্তু নির্বাচনে বিজেপি লুঠের টাকা ছড়ালে আপনারা মাথা নত করবেন না, কথা দিন। মনে রাখবেন ওই টাকা ওদের টাকা নয়। জনগণের টাকা। এটা লুঠের টাকা। এই নরেন্দ্র মোদীই ১৫ লক্ষ টাকা করে দেবেন, দিয়েছেন? মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ মেনে বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরি করব, যাতে অনগ্রসর শ্রেণিকে ওবিসি-র আওতায় আনা যায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকার এলে আগামী দিনে ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে দেব। ৪ শতাংশ সুদে ক্রেডিট কার্ড। সেখান থেকে মেডিক্যাল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফি দেওয়া যাবে। নিজেদের পড়াশোনার খরচ নিজেরাই চালাতে পারবেন পড়ুয়ারা। দিল্লি সরকারও মেনেছে বাংলায় বেকারত্ব ৪০ শতাংশ কমেছে, যারা কি না আমার শত্রু। মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রেই হাত খরচ পান না। তাঁদের জন্য বছরে ৬ হাজার টাকার ব্যবস্থা করছি আমরা। মাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। চাষিদের কাছ থেকে ৩১ টাকায় চাল কিনে মানুষকে ২ টাকায় দিতাম। এখন এক পয়সাও দিতে হয় না। খাদ্যসাথীতে এখন বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। তৃণমূলকে ভোট দিন, আগামী দিনে বাড়িতে রেশন পৌঁছে দেব। দুয়ারে সরকার দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেবে। খড়্গপুরের অনেক মানুষ রেলে কর্মরত। সেই রেল বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টায় বিজেপি। রেলকর্মীদের অনুরোধ, বিজেপি-কে একটি ভোটও দেবেন না। ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন মানুষ। সেই ব্যাঙ্কও বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। কোথায় টাকা রাখবেন মানুষ? দুঃসহ গরমের চেয়েও দুঃসহ বিজেপি-র অত্যাচার। বহিরাগত গুন্ডাদের হাতে বাংলাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পায়ে চোট লেগেছে। যত কষ্টই হোক না কেন বিজেপি-কে বাংলা দখল করতে দেব না।