হিন্দু ধর্মে একাদশী তিথির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই তিথি বিষ্ণুকে সমর্পিত। বছর দুবার পুত্রদা একাদশী পালিত হয়। এ বছর ১০ জানুয়ারি, পুত্রদা একাদশী ব্রত পালিত হবে। পৌষ পুত্রদা একাদশী অত্যন্ত শুভ, বিশেষ করে দেশের উত্তর রাজ্যগুলিতে ভগবান বিষ্ণুর অনুসারীদের জন্য। দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চলে, পৌষ পুত্রদা একাদশী’ বা ‘বৈকুন্ত একাদশী ‘ অথবা ‘স্বর্গবতীল একাদশী’ বা ‘মুখোটি একাদশী’ হিসাবে পালিত হয়। এ দিন বিষ্ণুর পূজার্চনা করা হয়। ধর্ম শাস্ত্র অনুযায়ী পুত্র লাভের জন্য এই একাদশী ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। নিঃসন্তান দম্পতিদের এই একাদশী ব্রত পালন করা উচিত। এই তিথিতে ব্রত পালন ও পুজো করলে বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করা যায়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই ব্রত পালন করলে পরিবারে সুখ-শান্তির আগমন ঘটে। পাশাপাশি এই ব্রতর প্রভাবে বিষ্ণুর পাশাপাশি লক্ষ্মীর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এটি কেবল আর্থিক সমৃদ্ধিই নয়, স্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তিও প্রদান করে। পৌষ পুত্রদা একাদশীর দিনে পঞ্চমুখী প্রদীপ জ্বালালে গৃহে সমৃদ্ধি, সুখ ও শান্তি আসে। পঞ্চমুখী প্রদীপ পাঁচটি দিকের সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে প্রধান দিকগুলি হল পূর্ব, উত্তর, এবং উত্তর-পূর্ব। এই প্রদীপ জ্বালিয়ে, ব্যক্তি এই দিকগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত শুভ প্রভাব লাভ করে। বিশেষ করে এই দিনে প্রদীপ জ্বালালে বাড়ির আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। ব্যক্তি সম্পদ লাভ করে এবং আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়। ঋণ ও আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাবেন। পৌষ পুত্রদা একাদশীর গুরুত্ব শুধু আর্থিক সুবিধার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও সাহায্য করে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, পঞ্চমুখী প্রদীপ জ্বালানো রোগ নাশ করে। যদি কোনও ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে কোনও রোগে ভুগছেন, তবে এই দিনে এই প্রতিকারটি তার রোগ নিরাময়ে সহায়ক হয়। এছাড়াও পঞ্চমুখী প্রদীপ জ্বালানো ঘর এবং ব্যক্তির চারপাশ থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করে। ঘরে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয় এবং অশুভ শক্তির প্রভাব দূর হয়। এই প্রতিকার মানসিক শান্তি এবং শিথিলতা প্রদান করে।
পুত্রদা একাদশী ব্রতকথা
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী এক নগরে সুকেতুমান নামক এক রাজার রাজত্ব ছিল। তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল শৈব্যা। তবে রাজা-রানির কোনও সন্তান ছিল না। যে কারণে তাঁরা সবসময় দুঃখী থাকতেন। তাঁদের পর কে তাঁদের রাজকার্য পরিচালনা করবে, আবার কে তাঁদের অন্ত্যেষ্টি, শ্রাদ্ধ, পিণ্ডদান করবে, তা ভেবে ভেবে রাজা-রানি কষ্ট ভোগ করতেন। এ কথা ভেবে ভেবে রাজা অসুস্থ হতে শুরু করেন। একদা রাজা জঙ্গলে ভ্রমণ করছিলেন। সেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছিলেন তিনি। কী ভাবে হরিণ, ময়ূর-সহ অন্য পশু-পক্ষী নিজের স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে জীবনযাপন করছে, তা দেখে দেখে উৎফুল্ল হচ্ছিলেন রাজা সুকেতুমান। কিন্তু সেই সঙ্গে নিঃসন্তান হওয়ার দুঃখের কারণে তাঁর মন বিচলিত হয়। তিনি ভাবেন যে এত পুণ্যকর্ম সত্ত্বেও তিনি নিঃসন্তান রয়েছেন। তখনই রাজার তৃষ্ণা পায় ও তিনি জলের সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘুরতে ঘুরতে নদীর ধারে এক ঋষির আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। সেখানে ঋষিকে দণ্ডবৎ প্রণাম করেন সুকেতুমান। রাজার সরল স্বভাব দেখে ঋষি অধিক প্রসন্ন হন ও তাঁকে বর চাইতে বলেন। তখন রাজা উত্তর দেন যে, ঈশ্বর ও সন্ত-মহাত্মাদের আশীর্বাদে তাঁর কাছে সব কিছু আছে। কিন্তু একটি মাত্র কষ্টই তাঁকে শেষ করে দিচ্ছে, যে তাঁর কোনও সন্তান নেই। যে কারণে নিজের সমগ্র জীবনকেই বৃথা মনে করেন তিনি। এ কথা শুনে ঋষি তাঁকে শ্রদ্ধা-ভক্তি ভরে পুত্রদা একাদশীর ব্রত পালন করতে বলেন। পাশাপাশি এ-ও বলেন যে এই একাদশীর পুণ্য প্রভাবে পুত্র লাভ করা সম্ভব হবে। ঋষির কথা শোনার পর রাজা সমস্ত নিয়ম মেনে এই ব্রত করেন ও দ্বাদশী তিথিতে পারণ করেন। এর শুভ প্রভাবে কিছুদিন পরই রানি শৈব্য গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এক তেজস্বী পুত্র সন্তান লাভ করেন তিনি।
পৌষ পুত্রদা একাদশীর সময়সূচী –
পঞ্জিকা অনুযায়ী পুত্রদা একাদশী তিথি শুরু হবে ৯ জানুয়ারি দুপুর ১২টা ২৩ মিনিটে তার পর ১০ জানুয়ারি সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই তিথি সমাপ্ত হবে। উদয়া তিথি অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি পৌত্রদা একাদশী পালিত হবে।
সূর্যোদয় | ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ সকাল ৭ঃ১৪ |
সূর্যাস্ত | ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ বিকাল ৫ঃ৫৪ |
একাদশী তিথি শুরু | ৯ জানুয়ারী, ২০২৫ দুপুর ১২ঃ২৩ |
একাদশী তিথি শেষ | ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ সকাল ১০ঃ২০ |
হরি ভাসার শেষ মুহূর্ত | ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ বিকাল ৩ঃ৫০ |
দ্বাদশী শেষ মুহূর্ত | ১১ জানুয়ারী, ২০২৫ সকাল ৮ঃ২২ |
পরানা সময় | ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:১৪ – ১১ জানুয়ারি, ৮ঃ২২ |
পুত্রদা একাদশীর উপায়
- পৌষ পুত্রদা একাদশীর দিন পঞ্চমুখী প্রদীপ জ্বালানো খুবই শুভ। এটি কেবল আর্থিক সমৃদ্ধিই নয়, স্বাস্থ্য ও মানসিক শান্তিও প্রদান করে। এই দিনে শ্রী বিষ্ণুর পুজো ও পঞ্চমুখী প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে জীবনের বিশেষ কিছু সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ হয়,।
- এই একাদশীতে তুলসী মালায় সন্তান গোপাল মন্ত্র জপ করুন। পাঁচ মালা জপ করতে হবে এই মন্ত্র- ‘ওম দেবকীসুত গোবিন্দ বাসুদেব জগত্পতে, দেহি মে তনয়ং কৃষ্ণ ত্বমহং শরণং গতঃ’। সন্তান লাভের জন্য এটি কার্যকরী মন্ত্র।
- পুত্রদা একাদশী তিথিতে বিষ্ণু সহস্ত্রনাম পাঠ করলে বাড়িতে উপস্থিত নেতিবাচক শক্তি ধ্বংস হয় ও পরিবারে আনন্দ বজায় থাকে।
- বিষ্ণুকে হলুদ রঙের ফুলের মালা পরান। চন্দনের তিলক লাগান। নিজেও চন্দের তিলক লাগাবেন। এর ফলে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি সম্ভব।