বিনোদন

‘ব্রহ্মদৈত্য’-এর হাত ধরে বাজিমাত অভিরূপ ঘোষের

ইশিতা উপাধ্যায়, কলকাতাঃ: সিনেমাপ্রেমীদের কাছে ভৌতিক ছবি সবসময়ই অন্য মাত্রা পেয়ে এসছে। তবে বাংলা সিনেমার তালিকায় সেভাবে কোনও ভৌতিক ছবি দর্শকের মণিকোঠায় জায়গা করে নিতে পারেনি এতদিন। তবে সেই প্রথা এবার ভেঙ্গে গেল। পরিচালক অভিরূপ ঘোষের হাত ধরে হরর ছবির ভক্তরা পেয়ে গিয়েছেন একটি আপাদমস্তক বাংলা ভূতের সিনেমা। তাও আবার বাংলার সবচেয়ে মাহাত্যপূর্ণ ভূত ‘ব্রহ্মদৈত্য’। এর আগেও অভিরূপ দর্শকদের জন্য বেশ অন্যরকম ছবি উপহার দিয়েছেন। এর আগে তিনি দর্শকদের ‘জম্বিস্থান’-এর দর্শন করিয়েছিলেন। এবার তিনি ‘ব্রহ্মদৈত্য’-এর দর্শন করালেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর হইচই-তে মুক্তি পেয়েছে ‘ব্রহ্মদৈত্য’। বর্তমানে যেখানে বিদেশি ভূতেরা চর্চার মূল কেন্দ্রে বিচরণ করছেন, সেখানে পরিচালক নিজের ছবির জন্য দেশীয় ভূতকেই নির্বাচন করেছেন। এই ছবির হাত ধরে ছোটবেলার শোনা বা পড়া সাহিত্যের পাতার সেই ভূতের কথা মনে পড়ে যায়। বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ ভূত ‘ব্রহ্মদৈত্য’-কে ছবির মূল বিষয়বস্তু করে তুলেছেন অভিরূপ। তবে এক্কেবারে বর্তমান সময়কে মাথায় রেখে। ছোটবেলার ঠাকুমার ঝুলির কিছু অংশকেও ছবিতে রেখেছেন তিনি। এই ছবির লেখক, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং সংলাপকারের দায়িত্ব একাই সামলেছেন অভিরূপ ঘোষ। আর তাঁর প্রত্যেকটি কাজই নিখুতভাবে পালন করেছেন তিনি। ছবির মূল চরিত্র

সায়ন্তিকার ভূমিকায় রয়েছেন সায়নী ঘোষ। মুখ্য ভূমিকায় বেশ ভালো অভিনয় করেছেন তিনি। ছবির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ‘ব্রহ্মদৈত্য’-এর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন সৌমাল্য দত্ত। তাঁর ‘ব্রহ্মদৈত্য’ রূপে অনায়াসে ভয়ের হিমশ্রোত বয়ে যাবে দর্শক মনে। সায়নীর সহকর্মীর ভূমিকায় সৌমন বোসের অভিনয়ও বেশ ভালো। ছবিতে পুলিশের ভূমিকায় সৌরভ সাহা তাঁর অভিনয় এবং কমেডি টাইমিং দিয়ে বিশেষভাবে ছাপ ফেলেছেন। এছাড়াও ছবিতে একজন মিডিয়ামের ভূমিকায় রয়েছেন রুদ্রনীল ঘোষ। প্রতিটা ছবির মতো এখানেও দারুণ অভিনয় করেছেন তিনি। ছোট একটা চরিত্রে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ও বেশ ভালো অভিনয় করেছেন। ছবির অন্তিম পর্যায় যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছে তা অনবদ্য। ভৌতিক আবহের মধ্যেও থ্রিলের ছোঁয়া দিয়ে ছবির গল্পকে এক্কেবারে অন্যমাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন অভিরূপ। ভৌতিক ছবির অন্যতম বিষয় হল সঠিক আবহের সৃষ্টি করা। আর এই কাজটি চমৎকার ভাবে পালন করেছে মেঘ ব্যানার্জী। যোগ্য আবহ নির্মাণ করে ছবির মাহাত্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মেঘ। পাশাপাশি সিনেমাটগ্রাফি, কালার কারেকশন এবং ক্যামেরার কারসাজির দিকেও বেশ যত্ন নেওয়া হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেলেও এই ছবি সিনেমাহলের বড় পর্দায় আসার যোগ্যতা রাখে তা মেনে নিতেই হয়। সব মিলিয়ে ‘ব্রহ্মদৈত্য’ যে বেশ প্রশংসার দাবি রাখে তা বলাই বাহুল্য। এই ছবি দর্শক মনে যে গভীর ছাপ ফেলবে তা বলাই যায়।