জেলা

বহরমপুরে সুতপা হত্যাকাণ্ডের ৩৮৩ পাতার চার্জশিট

২০২২ সালের ২ মে ভরসন্ধ্যায় নিজের  মেসের বাইরে খুন হন বহরমপুর গার্লস কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। মালদার বাসিন্দা সুতপা বহরমপুরে পড়তে এসেছিলেন। সেই বহরমপুরেই প্রেমিকের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়ে যান সুতপা। সেই হত্যা মামলায় আজ রায়দান।  জানা গিয়েছে, সেদিন এক বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন সুতপা। সিনেমা দেখে ফেরার সময় সুতপার পিছু নেয় সুশান্ত। মেসের সামনে আসতেই হামলা করে সে। খুনের ছবি ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়। খুনের  কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সামসেরগঞ্জের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সুশান্তকে গ্রেফতার করে পুলিস। ঘটনার ৭৫ দিনের মাথায় বহরমপুর আদালতে সুতপা হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট পেশ করে পুলিস। অভিযুক্ত সুশান্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) ও ২০১ ( প্রমাণ লোপাট)  ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালতে জমা পড়ে ৩৮৩ পাতার চার্জশিট। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, পুর্বপরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয় ছাত্রীকে। খুনের আগে অনলাইনে একটি খেলনা বন্দুকও কিনেছিল অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী। সুতপাকে খুনের সুযোগ খুঁজতে বহরমপুরে একটি মেসে থাকতেও শুরু করেছিল সুশান্ত। শেষ যে মেসে সুশান্ত ছিল, সেই মেসের দূরত্ব সুতপার মেস থেকে মাত্র ২৫০ মিটার। আইনজীবীদের দাবি, খুনের উদ্দেশ্যেই বহরমপুরে এসেছিল সুশান্ত। অভিযুক্ত সুশান্তকে খুনের পর নিজের চোখে পালাতে দেখেন দুই সাক্ষী। জানা যায়, খুনের পর পাঁচিল টপকে পালায় সুশান্ত। এরপর যায় তার মেসে। সেখান থেকে বেড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল সে। খুনের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৬টায় মেস থেকে বেরিয়েছিল সুশান্ত। ফের মেসে ফেরে সন্ধ্যা ৭ টায়। তারপর সেখান থেকে পালায় সুশান্ত। কলেজ পড়ুয়া সুতপার দেহে ছিল ৪২টি আঘাত। আঘাত গুরুতর হওয়াতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা সুতপাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে পিস্তল দেখিয়ে ভয় দেখায় সুশান্ত। পরে যদিও পুলিস জানায়, ওই বন্দুক আসলে খেলনা বন্দুক। সুতপা চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকেই একাধিকবার অশান্তি সৃষ্টি করেছিল সুশান্ত। তদন্তে উঠে এসেছে,  সুতপা চৌধুরীর উপর রাগ ও হতাশা থেকেই এই খুন। পুলিসকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা বয়ান দেওয়ারও চেষ্টা করে সুশান্ত। তবে লাভ হয় নি। শুনানি চলাকালীন ৩৪ জনের সাক্ষী গ্রহণ করেছে আদালত। তদন্তে রয়েছে একাধিক ‘ইলেকট্রনিক এভিডেন্স’ ও। রয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ, এক সাক্ষীর দেওয়া ভিডিয়ো ফুটেজ, অভিযুক্তের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন সহ কল রেকর্ড। জানা গিয়েছে আগে সুশান্তর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সুতপা চৌধুরীর। সুতপা সেই সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে আসতেই এই কাণ্ড ঘটায় অভিযুক্ত। মঙ্গলবার আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হতে পারে সুশান্ত চৌধুরীকে। তারপর হবে রায়দান। মঙ্গলবার  বহরমপুরের তৃতীয় দ্রুত নিষ্পত্তি (ফাস্ট ট্র্যাক) আদালতের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠকের এজলাসে রয়েছে সুতপা চৌধুরী খুনের মামলার শুনানি। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী পীযূষ ঘোষ। সরকারপক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।