করোনা সংক্রমণ রুখতে এবং অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকেই একাধিক পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। প্রতি পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় অন্তত একটি করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী যান রাখার মত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী আজ শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের জায়গাতে ‘সেফ হোম ‘তৈরির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এই দিনের বৈঠকে। করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য হাসপাতালে উদ্বিগ্ন হয়ে অযথা ভিড় না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, যারা প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছেন তাঁদের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হবে। এর জন্য একটি নির্ঘণ্ট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তাঁরা যাতে নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় দফার টিকা পান তা নিশ্চিত করতে সরকার সব রকমের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রথম ডোজের টিকা পাওয়ার সময় সীমার ভিত্তিতে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়ার অগ্রাধিকার স্থির করা হবে। যারা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে প্রথম পর্যায়ে টিকা নিয়েছেন তাঁরাও নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতাল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন। কারা কোন সময় টিকা পাবেন সরকারের তরফে তা প্রাপকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রের কাছ থেকে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত প্রতিষেধক পাওয়া গেলে তবেই রাজ্যে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু হবে বলে মুখ্যসচিব এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন। টিকার নিয়মিত অপর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে নিয়মিত কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন। অন্যদিকে অতিমারীর আবহে রাজ্যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘাটতি মেটাতে রাজ্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল তার ফলস্বরূপ দুহাজারের বেশি শিক্ষানবিশ চিকিৎসক এরই মধ্যে নিয়োগ করা হয়েছে। নার্স, প্যারামেডিক সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। রেমেডিসিভির জাতীয় দুষ্প্রাপ্য ওষুধের যোগানও কিছুটা বেড়েছে বলে মুখ্যসচিব জানান। করোনা চিকিৎসার পরিকাঠামো বাড়াতে জেলায় জেলায় অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় অন্তত একটি করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও শববাহী যান রাখার মত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের জায়গাতে সেফহোম তৈরির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে এই দিনের বৈঠকে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গেছে। ক্যাবিনেট বৈঠকের পরেই রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে নয়া সিদ্ধান্তের কথা জানান। বলা হয়েছে–
🔴 কোভিড মোকাবিলায় এবার এগিয়ে এসেছে পুজো কমিটিগুলি। তাঁদের ক্লাব বা কমিউনিটি হলে তৈরি হবে সেফ হোম বা অক্সিজেন বুথ।
🔴 অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজ্যের প্রায় সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পিএসএ প্লান্ট বসানো হবে।
🔴 ১৪ হাজার ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারকে মেডিক্যাল সিলিন্ডারে পরিণত করা হয়েছে।
🔴 অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের জন্য বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি রাজ্যকে সাহায্য করছে। ভেন্টিলেটরেরও ব্যবস্থা করছে।
🔴 অক্সিজেন সরবরাহের বিষয় নজরদারির জন্য অক্সিজেন ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করছে রাজ্য।
🔴 যাঁরা ইতিমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়ে গিয়েছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন তাঁরাই। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যাঁরা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দেবে রাজ্য। কে কোন নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন, তা সরকার জানিয়ে দেবে।
🔴 পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা এলে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়া হবে।
🔴 চুক্তি ভিত্তিতে চিকিৎসা কর্মী, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়োগ করবে রাজ্য।
🔴 প্রয়োজনে এমবিবিএসের চূড়ান্ত পর্বের পড়ুয়াদের কাজে লাগানো হতে পারে।
🔴 প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকায় অন্তত একটি অ্যাম্বুল্যান্স এবং শববাহী যান রাখার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্যের।