তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পথেই হাঁটতে চলেছে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের প্রাক্তন সংস্থা আই-প্যাক। সূত্রের খবর, আইপ্যাকের তরফ থেকে তৃণমূলকে মোটামুটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা বাংলা, ত্রিপুরা আর মেঘালয়ে তৃণমূলের কাজকর্ম আর দেখবে না। পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে গত কদিন ধরে নানা গোলমাল চলছে। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তার পরই তৃণমূলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আরও একটি তালিকা প্রকাশ পায়। এই দুই তালিকা নিয়ে চরম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের দাবি, ফেসবুক পেজে প্রকাশিত তালিকাটি দলের তালিকা নয়। তাতে পার্থ এবং সুব্রতর স্বাক্ষর নেই। তাঁদের স্বাক্ষরিত তালিকা জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন রাত থেকেই দুই তালিকায় থাকা নাম নিয়ে জেলায় জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ থেকে শুরু করে নেতৃত্বের নাম ধরে গালিগালাজ,পার্থী বদল, নির্দল হয়ে দাঁড়ানোর হুমকি, সবই চলে অবাধে। প্রার্থী তালিকার বিরুদ্ধে পথে নামেন বহু বিধায়ক এবং জেলা পর্যায়ের অনেক নেতাও। অভিযোগ নেতাদের অন্ধকারে রেখেই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।কোনও কোনও জেলায় মঙ্গলবারও প্রার্থী তালিকা ঘিরে তৃণমূলের অশান্তি অব্যাহত ছিল। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি ১৮টি আসন পাওয়ায় তৃণমূলের কপালে তৃণমূলের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে। মূলত তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই পিকের আইপ্যাক সংস্থাকে বাংলায় নিয়ে আসা হয়।তৃণমূলের অন্দরের খবর, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আইপ্যাকের সঙ্গে তাঁদের চুক্তি রয়েছে। গত বিধানসভার ভোটেও প্রার্থী তালিকা
তৈরি করা নিয়ে তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আইপ্যাকের বিরোধ দেখা গিয়েছিল। তৃণমূলের আদি এবং প্রবীণ নেতারা আইপ্যাকের ছড়ি ঘোরানো ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে জেতায় সেই বিরোধ আর ততটা তীব্র হয়নি। কলকাতার পুরভোটে অনেক ক্ষেত্রেই আইপ্যাকের ঠিক করে দেওয়া প্রার্থীদের মানেননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। সেসব ক্ষেত্রে রাজ্য নেতারা প্রার্থী বদল করে দিয়েছেন। এবার ১০৮টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা নিয়ে আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের বিরোধ চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সেই বিরোধের আগুনে ঘি পড়েছে সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে না দেখিয়েই তৃণমূলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে তালিকা প্রকাশ করে দেওয়ার ঘটনায়। এরপর মমতা ঘনিষ্ঠ মহলে আইপ্যাকের সঙ্গে আর সম্পর্ক না রাখার কথা জানিয়ে দেন। তিক্ততা এতই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সোমবার লখনউ যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে আইপ্যাক সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ‘এটা দলের বিষয় নয়। তা নিয়ে একটি কথাও বলব না।’ প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল ভালো হতেই তড়িঘড়ি ডাক পড়েছিল প্রশান্ত কিশোরের। ভোটকুশলী হিসেবে সেই ২০১৯ থেকেই মমতার সঙ্গে রয়েছে পিকে-র সংস্থা আইপ্যাক। বিধানসভা নির্বাচন সহ পরের ভোটগুলিতে ভালো ফলও করেছে তৃণমূল। কলকাতা পুর নির্বাচনেও সব ঠিক ছিল। কিন্তু ১০৮ পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই বিচ্ছেদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। দলের অন্দরেও কান পাতলে শোনা যাচ্ছে সেই গুঞ্জন। আর এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই কিছুটা সুর চড়িয়েই মমতা বললেন, ‘এ সব নিয়ে কোনও কোনও প্রশ্ন করবেন না। এটা দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়।’ প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষের প্রশ্নে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সবাইকে খুশি করা যাবে না। পার্থ-বক্সির দেওয়া তালিকাই চূড়ান্ত।” আবার বিকেলেই পার্থ বলেন, ‘আইপ্যাকের সঙ্গে দলের যাঁরা যোগাযোগ রাখেন, তাঁরাই সব বলতে পারবে।’ তাঁর ইঙ্গিত অভিষেকের দিকে ছিল কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সোমবারই বিক্ষোভ সামাল দিতে দলের মহাসচিব জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক বা কো-অর্ডিনেটর নিয়োগের কথা বলেছে। সেই তালিকাতেও অভিষেকের নাম না থাকা নিয়েও কথা উঠেছে। তাছাড়া আইপ্যাকের সরে আসার ঘোষণায় নানা জল্পনা চলছে।