কলকাতা

প্রধানমন্ত্রীর ‘দিদি ই–ই–ই’ ডাকে ‘অপমানজনক টোন’! প্রশাসনিক শীর্ষ পদে বসা দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে এই রকম ডাক শোভনীয় নয়

গত কয়েকটি পর পর সভায় দেখা গিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে ‘দিদি ই–ই–ই বলে কার্যত সুর চড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টিকে যে তৃণমূল খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি তা আগেও জানান দিয়েছে ঘাসফুল শিবির। প্রশাসনিক শীর্ষ পদে বসে দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ‘‌দিদি–ই, ও দিদি–ই–ই–ই’‌ ডাক একেবারেই শোভনীয় নয়। এবার নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি নিশানা করলেন তৃণমূলের মহিলা নেত্রীরা। সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে বাংলায় এসে তৃণমূল নেত্রীকে সুর তুলে ‘‌দিদি–ই–ই–ই’‌ সম্বোধন করতে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে। বিষয়টি নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছে কড়া আক্রমণ শানিয়েছিলেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। এবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির ভাষা–প্রয়োগ নিয়ে সরব হলেন মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য জুন মালিয়া, রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্যামপুকুরের তৃণমূল প্রার্থী শশী পাঁজা এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা সমাজকর্মী অনন্যা চক্রবর্তী। জুন বলেন, ‘‌এর আগে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীই এরকম আচরণ করতেন বলে জানি না। মনে রাখতে হবে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।’‌ নরেন্দ্র মোদির এই আচরণ থেকে কী শিখবে আগামী প্রজন্ম, এই প্রশ্ন তুলে তোপ দাগেন তিনি। বলেন,‌ ‘‌পুরুষতান্ত্রিক সমাজে থেকে মহিলাদের অপমান করা অনেক সহজ।’‌ শশী পাঁজা বলেন, ‘‌প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু আজ যাঁরা ওই পদে বসে রয়েছেন, তাঁরা নিজেরাই সেই পদের মর্যাদা বজায় রাখতে পারছেন না। দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি যে শব্দ প্রয়োগ করছেন, তা লজ্জাজনক এবং এতে তাঁর নারীবিদ্বেষী মনোভাব স্পষ্ট।’‌ পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চিন্তাধারাকে বাংলায় নিয়ে আসতে চাইছে বিজেপি, অভিযোগ করেন অনন্যা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‌মহিলাদের বিন্দুমাত্র সম্মান করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। নিজের স্ত্রীকেও মর্যাদা দেননি। এমনকী হলফনামাতেও নিজের বিয়ের কথা উল্লেখ করেননি।’‌ এবার শশী পাঁজারা এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে সেই বক্তব্য নিয়ে সুর চড়ালেন। শী পাঁজা এদিন সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে যখন মোদী ‘দিদি.. দিদি.. কাহাঁ হ্যায় দিদি..’ বক্তব্য রাখেন, তখন তা একনজন নেতার তরফে একজন নেত্রীর প্রতি বক্তব্যের নিরিখে অপমানজনক হয়ে ওঠে। আর এই ডাকের ধরন নিয়েই আপত্তি ঘাসফুল শিবিরের। ‘বাংলার মা বোনেদের অপমান করা হয়েছে। দিদির হাত ধরে নারী শক্তি ১০ বছরে উত্থান করা হয়েছে।’ এই বক্তব্যের রেশ ধরেই জুন বলেন, একজন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, অতীততে কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন ধরনের সুরে কথা বলেছেন বলে তাঁর জানা নেই। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, যেভাবে প্রধানমন্ত্রী ‘দিদি দিদি’ ডাকের ঘরানায় মুখ্যমন্ত্রীকে সম্বোধন করেছেন,তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপমান করা হয়েছে বলে তৃণমূল জানায়। আর সেই মর্মেই দমদম থানায় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।