ফের সিদ্ধান্ত বদল। আর তাতেই জটিলতা বেড়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। শেষে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাল কেএমআরসিএল বা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড। মধ্য কলকাতার বউবাজার এলাকার দুর্গা পিতুরি লেনে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো রেলের নির্মাণ কাজের জন্য নতুন করে যে ১৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ২টি বাড়ি সোমবার ভাঙা হবে, তাও আংশিক। দুটি বাড়িরই বিপদজনক অংশ ভাঙার পরে যদি দেখা যায়, বাড়ির বাকি অংশ নিরাপদ, তাহলে সেই অংশটি আর ভাঙা হবে না। কিন্তু যদি দেখা যায়, বাকি অংশ বিপজ্জনক, তাহলে পুরো বাড়িটিই ভেঙে ফেলা হবে। এই দুটি বাড়ি হল ১৬ এবং ১৬/১ নম্বর দুর্গা পিটুরি লেন।সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কার্যত চূড়ান্ত বিভ্রান্ত তৈরি হয় মেট্রোর সিদ্ধান্ত নিয়ে। বার বার সিদ্ধান্ত বদল করেন কেএমআরসিএলের আধিকারিকেরা। এই প্রসঙ্গে এদিন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘মেট্রো নিজেরাই কনফিউজড। একপক্ষ বলছে ভাঙবে, একপক্ষ বলছে ভাঙবে না। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি কি ভাঙা হবে? না, ভাঙা হবে না? যদি বাড়ি ভাঙা হয়, তাহলে পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে? এতগুলো সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলি।’ এই টানাপোড়েনের মাঝেই হস্তক্ষেপ করেন ফিরহাদ হাকিম। মেট্রো আধিকারিকদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সময় বেঁধে দেন। তারপরেই মেট্রো আধিকারিকেরা জানান ১৬
এবং ১৬/১ নম্বর দুর্গা পিটুরি লেন এই দুটি বাড়ি ভাঙা হবে আংশিক ভাবে। ওই দুই বাড়ির বিপদজনক অংশ ভেঙে ফেলার পরে যদি দেখা যায় বাড়িদুটি ঠিকঠাক আছে তাহলে আর ভাঙা হবে না। একই সঙ্গে তাঁরা এটাও জানান, এলাকার বাকি বাড়িগুলির ক্ষেত্রে কলকাতা পুরনিগমের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরামর্শ নেওয়া হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদেরও। তবে বাড়ি যে ভাঙা পড়বে সেটা বুঝে নিয়েই এদিন সকাল থেকেই ওই দুই বাড়ির বাসিন্দারা নিজেদের জিনিস নিয়ে বাড়ি খালি করে দিতে শুরু করেন। আর তখনই দীর্ঘদিনের বাড়ির টানে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তাও তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁদের। বাসিন্দাদের বক্তব্য, এই বাড়িগুলোতে শুধু টাকা-পয়সা বা আসবাবপত্র নেই, এই বাড়িগুলোতে জড়িয়ে আছে অনেক দিনের স্মৃতি ও আবেগ। ঘড়ির কাঁটা এগারোটার ঘরে যেতেই দেখা যায় ১৬ ও ১৬/১ নম্বর বাড়িতে ইঞ্জিনিয়ারদের আনাগোনা। সেখানে ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে রাখার সঙ্গে ফিতে দিতে মাপা ও হয়। বাড়িগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি রেকর্ড রাখতেই ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে সেই ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়। ফিতে দিয়ে মাপার কারন মূলত, বাড়ির বিপদজনক অংশ বুঝে নেওয়া ও কি পদ্ধতিতে ভাঙা হবে তা আলোচনা করা। কারন বর্তমানে দূর্গা পিতুরি লেনের একাধিক বাড়ির অবস্থা ভালো নেই, তুলনামূলক ভাবে বেশি ক্ষতি হয়েছে ১৬ ও ১৬/১ নম্বর দুটো বাড়ি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ তাঁদের হোটেলে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিন্তু বাড়ির জিনিসপত্র কোথায় রাখবেন তা নিয়ে তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন, এইভাবে কতদিন থাকতে হবে? তাঁরা কী আদৌ আর তাঁদের পুরাতন পাড়ায়, পুরাতন বাড়িতে ফিরতে পারবেন। নাকি চিরকালের মতো তাঁদের বিদায় নিতে হবে দুর্গা পিতুরি লেন থেকে।