আহতদের চিকিৎসা ও ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ
কলকাতাঃ নিমতিতা স্টেশন বোমা আক্রমণে গুরুতর জখম রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে দেখতে এসএসকেএমে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার পেছনে গভীর চক্রান্ত আছে। রেলের নিরাপত্তার দিকেও আঙুল তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । জানা গিয়েছে, জাকিরের উপর আক্রমণের ঘটনায় প্রায় ২৬ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। ঘটনাস্থলে জখম হয়েছেন সাধারণ পথচারিও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো ব্যাপারটা খুবই ভয়াবহ। কেউ ট্রেন ধরতে যাচ্ছে। সে কোন প্ল্যাটফর্মে যাবে, কখন ট্রেন ধরবে, তার সব খবর আগাম ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে! যাঁরা জাকিরের সঙ্গে ছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন, রিমোট কন্ট্রোলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। জাকিরের সঙ্গে ওর ভাগ্নে ছিল। সে-ও আমায় একই কথা বলেছে। সেটা সত্যি কি না আমি জানি না। বিষয়টা নিয়ে তদন্ত চলছে। স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কথা শুনে আমার মনে হয়েছে, জাকিরের চলাফেরার খবর জেনেশুনেই এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।” তাঁর কথায়, ”এটা জাকিরকে হত্যা করার জন্য সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।” মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, জাকির হুসেন ছাড়াও আরও অনেকে আহত। বিস্ফোরণে হাত-পা উড়ে গেছে অনেকের। রাজ্য সরকার সকলের চিকিতসার ব্যবস্থা করবে বলে তিনি জানান, প্রয়োজনে প্রস্থেটিক হাত-পাও বসানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল কেবল একটি টুইট করেছেন দুঃখপ্রকাশ করে। মমতার কথায়, ‘উনি টুইট করে ক্ষান্ত হয়ে গেলেন? উনি জানেন, মানুষের হাত-পা উড়ে গেছে? জাকিরকে অন্য দলে টানার চেষ্টা করা হয়েছিল, এর বেশি কিছু বলব না আমি।’ তাঁর কথায়, ”ঘটনাটা ঘটেছে রেলের জায়গায়। অথচ রেল গোটা বিষয়টাকে খুব হাল্কা ভাবে দেখছে। ঘটনাটা যখন ঘটে, তখন স্টেশন চত্বরের ওই এলাকা পুরোপুরি অন্ধকার ছিল। কাছাকাছি কোনও রেলপুলিশও ছিল না। রেল এ ভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।”এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেন, তদন্তে কোনও খামতি থাকবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটে সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাচ্ছি। সিআইডি, সিআইএফ, এসটিএফ সত্য অনুসন্ধান করছে। খুব তাড়াতাড়িই সবটা সামনে আসবে।’ জানা গেছে, বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় আসছিলেন জাকির। নিমতিতা স্টেশন থেকে তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ধরে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। সেই সময় স্টেশন চত্বরে আচমকাই বিস্ফোরণ হয়। জানা গেছে, মন্ত্রীর ঠিক সামনেই বোমা ফাটে। জখম হন জাকির ও তাঁর কয়েকজন অনুগামী। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার পরে তাঁকে নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এ। আজ এসএসকেএম হাসপাতালে মন্ত্রীর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা আছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জাকিরের হাতে ও পায়ে বোমার আঘাতের ক্ষত রয়েছে। গোড়ালির হাড় ভেঙেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বোমার আঘাতে হাতের আঙুলেও মারাত্মক চোট রয়েছে। একটি আঙুলের প্রায় অর্ধেকটা উড়ে গেছে। নিমতিতা স্টেশনে জাকির হোসেন সহ বোমায় আহতদের চিকিৎসা করাবে রাজ্য সরকার। গুরুতর আহতরা পাবেন পাঁচ লক্ষ এবং কম আহতরা পাবেন এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। আজ একথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে এই ঘটনায় এই রাজ্যে মন্ত্রীরাও সুরক্ষিত নন বলে বিরোধী শিবির দাবি তুলছে। যার জবাবে ববি বলেন, ”বিরোধীরা মন্ত্রীদের সুরক্ষিত থাকতে দিচ্ছে না! গুজরাতে ২,০০০ লোককে খুন করা হয়েছিল। একজন সাংসদকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা রাজনৈতিক তরজার সময় নয়। কিন্তু এই প্রশ্ন এবং সন্দেহের জবাবে আমি এই কথাগুলো বলতে বাধ্য হচ্ছি! যে ভাবে কথা গুলো বলা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ‘এটা ঠাকুরঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি’ গোছের ব্যাপার নয় তো!” কুণালও বলেন, ”এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।” আর ত্বহার কথায়, ”উনি মানুষের জন্য কাজ করেন। কারও কাছে কিছু নেন না। বরং উল্টে মানুষকে দেন।”