শীঘ্রই বড় উইকেট পড়তে চলেছে বিজেপিতে। সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। প্রকাশ্যে এই নিয়ে শান্তনু নিজে বা বিজেপি কিংবা তৃণমূল কেউই মুখ না খুললেও তিন শিবির থেকেই সূত্রে খবরের সত্যতা জানা গিয়েছে। সেই সূত্রেই জানা গিয়েছে এই সপ্তাহেই গোপনে শান্তনুর সঙ্গে বৈঠকে সেরে ফেলেছেন তৃণমূলের এক মন্ত্রী। সেই বৈঠকে সম্ভবত ছিলেন প্রশান্ত কিশোরও। সেখানেই কার্যত ডিল ফাইনাল হয়ে গিয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন শান্তনু ঠাকুর। তারপর বনগাঁ মহকুমারই কোনও বিধানসভা আসন থেকে প্রার্থী হবেন তিনি। জিতলে হবেন মন্ত্রী। পাবেন জেড প্লাস সিকিউরিটি যা শুভেন্দু অধিকারী পেতেন। পাবেন বুলেট প্রুফ গাড়িও। তার ছেড়ে আসা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন মমতাবালা ঠাকুর। পারিবারিক স্তরে শান্তনু ও মমতাবালার মধ্যে বিবাদ থাকলেও এবার মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নে দুই জনকেই একসঙ্গে কাজ করার বার্তা দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফে। আর শান্তনুর এই যোগদানের সম্ভাবনা তীব্র হয়ে যাওয়ায় এখন মনে করা হচ্ছে বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় ২০১৯ সালে তৃণমূল যে মাটি হারিয়েছিল বিজেপির কাছে তা আবারও ফিরে আসতে চলেছে তৃণমূলের কাছেই। ২০১৯ সালে শান্তনু বিজেপির প্রার্থী হয়ে বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে লড়াই করেছিলেন। জিতেওছিলেন সেই নির্বাচনে। শান্তনু প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই কার্যত সিএএ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের জানিয়েছিলেন বিজেপিকে ভোট দিলে মোদি সরকার সিএএ লাগু করবে। তার জেরে মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। যদিও তৃণমূল তখনই জানিয়ে দিয়েছিল সিএএ এই রাজ্যে লাগু করতে দেওয়া হবে না। শান্তনু ভোটে জিতেও সিএএ লাগু করা নিয়ে মতুয়াদের একদিকে যেমন আশ্বাস দিয়ে গিয়েছে তেমনি বিজেপির পাশেও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দেশের বিরোধী শিবিরও সিএএ নিয়ে ক্রমশ সুর চড়ানোয় বিজেপি তথা মোদি সরকার এখন সিএএ নিয়ে দ্রুত এগোতে চাইছে না। এদিকে সিএএ লাগু না হওয়ায় মতুয়াদের মধ্যেও শান্তনুকে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। যে সিএএ লাগু হওয়া নিয়ে শান্তনু ভোটে জিতে এসেছিলেন সেই আইন লাগু না হওয়ায় শান্তনু নিজেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। এই অবস্থায় তিনি বিজেপির সব রকমের কর্মসূচি, সভা, মিছিলে যোগ দেওয়া বন্ধও করে দেন। অমিত শাহ বঙ্গ সফরে আসার আগেই কৈলাস বিজয়বর্গীয় নিজে ঠাকুরনগরে গিয়ে শান্তনুর সঙ্গে এই নিয়ে বৈঠকও করেন। সেই বৈঠকেই কৈলাস জানিয়ে দিয়েছিলেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সিএএ লাগু হবে। সেই সময়েই বিজেপির তরফে শান্তনুকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শান্তনুর পছন্দমতন প্রার্থীই দেওয়া হবে বনগাঁ ও রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে। তবে শান্তনু যেন তৃণমূলে না যান আর দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করেন। শান্তনুর ঘনিষ্ঠ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি অমিত শাহ বাংলায় এসে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, কোভিডের টিকাকরণ শুরু হওয়ার পরেই এনআরসি চালু করার কথা ভাববে কেন্দ্রীয় সরকার। আবার কোভিডের টিকাকরণ কবে চালু হবে, তার কোনও দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। একই সঙ্গে কোভিডের টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাওয়ামাত্রই যে ঝপ করে নাগরিকত্ব আইন চালু হয়ে যাবে, তেমন আশাও নেই। সব মিলিয়ে বাংলায় সিএএ কার্যত বিশ বাঁও জলে। এর থেকেই শান্তনুর মনে হয় যে বিজেপি আসলে মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই করছে না। এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি ক্ষোভও জানান। আর প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন অমিত শাহ ঠাকুরনগরে এসে সিএএ নিয়ে স্পষ্ট ঘোষণা না করে যাওয়া অবধি তিনি বিজেপির কোনও সভা বা কর্মসূচিতে যোগ দেবেন না। বিজেপির থেজে শান্তনুর ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে দেখে স্থানীয় নেতাদের মারফতই এই তরুণ সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে তৃণমূল। সম্প্রতি জানা গিয়েছে শান্তনু অমিত শাহকে কার্যত ঠাকুরনগরে এসে সিএএ নিয়ে স্পষ্ট যে ঘোষণা করার কথা বলেছেন তা ভালো চোখে নেয়নি গেরুয়া ব্রিগেড। তাই তাঁকে শোকজ করা হতে পারে। এরপরই শান্তনু নাকি তৃণমূলের এক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন যে বৈঠকে প্রশান্ত কিশোরও ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেখানেই সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। তবে প্রকাশ্যে এই নিয়ে কোনও শিবির থেকেই কোনও কিছু জানানো হয়নি। তবে কিবা তৃণমূল, কিবা বিজেপি কিবা শান্তনু ঘনিষ্ঠ কেউই এই সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করেনি।