ইসরায়েলে তৈরি একটি সফটওয়্যার দিয়ে ভারতের বেশ কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি চালানোর কথা স্বীকার করেছে ফেসবুক মালিকানাধীন মেসেজিং সংস্থাটি। হোয়াটসঅ্যাপ মামলাও করেছে ওই ইসরায়েলি সংস্থাটির বিরুদ্ধে। পেগাসাস নামের ওই নজরদারি সফটওয়্যার যাদের ফোনে ইন্সটল করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।যদিও ওই ইসরায়েলি কোম্পানিটি বলেছে, তারা শুধুমাত্র সরকারি এজেন্সিকেই ওই সফটওয়্যার দেয়, তবে ভারত সরকার ওই সফটওয়্যার দিয়ে নজরদারী চালানোর কথা অস্বীকার করছে।মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য সন্দেহ করছেন যে সরকার-বিরোধী আওয়াজ তুলছেন যারা, তাদের ওপরে কারা নজর রাখছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, সেটা বোঝা কঠিন নয়।এমনিতে হোয়াটসঅ্যাপে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ থাকে, যাতে যিনি মেসেজ পাঠাচ্ছেন আর যাকে পাঠানো হচ্ছে – শুধু তারাই দেখতে পারবেন।কিন্তু পেগাসাস নামের ওই সফটওয়্যারটি যাদের ফোনে ইন্সটল করা হয়েছিল, তাদের ‘এনক্রিপশন ব্রিচ’ করা হয়েছে বলে হোয়াটসঅ্যাপ নিজেই জানিয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি চালানোর এই ঘটনা সামনে আসার পরে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপি সরকারের দিকেই আঙ্গুল তুলছে। ভারত সরকার বলছে, তারা এই নজরদারির সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক বা মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার অভিযোগ রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, সেইসব ব্যক্তি এবং তাদের আইনজীবীদের ওপরে তাহলে কারা নজর রাখছিলেন কোটি কোটি ডলার খরচ করে? মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা সুজাত ভদ্রের কথায়, “এই সর্বগ্রাসী নজরদারি ভারত রাষ্ট্রই চালিয়েছে। যারাই সরকার-বিরোধী কথা বলছে, নির্দিষ্টভাবে তাদের ফোনেই এভাবে নজরদারি চালানো হয়েছে। এখনও হয়তো পুরো তালিকা আমরা পাই নি। কিন্তু সরকার ছাড়া কে এ কাজ করবে?” বিষয়টা জানাজানি হতেই দেখছি সরকার একটা বিবৃতি দিয়ে বসল। চারদিকে এত কিছু হয় – কই তখন তো সাত তাড়াতাড়ি বিবৃতি দিতে দেখি না? সেখান থেকেই সন্দেহ হয় যে আরও বেশি তথ্য বেরিয়ে আসা যাতে আটকানো যায়, সেজন্যই আগেভাগে বিবৃতি দিয়ে দিল সরকার।” সাইবার বিশেষজ্ঞ প্রশান্ত কুমার রায় বলছেন, “যাদের হোয়াটসঅ্যাপে এই পেগাসাস ইন্সটল করা হয়েছিল, তারা যা কাজকর্ম করেন, সেকারণেই ভারতের রাষ্ট্রীয় এজেন্সিগুলি এই নজরদারিতে যুক্ত আছে বলে সন্দেহ হচ্ছে। এরা সকলেই সামাজিক কর্মকর্তা বা সাংবাদিক বা আইনজীবী যারা দলিত আর আদিবাসীদের সঙ্গে কাজ করেন।” হোয়াটসঅ্যাপ বলছে, পদক্ষেপ নেয়ার পর তাদের নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে।”আমি তো অনেক ভেবেও এমন কোনও দেশের নাম খুঁজে পেলাম না যাদের এই কয়েকজনের কাজকর্ম নিয়ে আগ্রহ থাকার বিন্দুমাত্র কারণ আছে। এমন কি পাকিস্তানও বা কেন এদের ব্যাপারে আগ্রহী হবে?
সূত্রঃ বিবিসি নিউজ – https://www.bbc.com/bengali/news-50268477