জেলা দেশ

মহরম কোনও উৎসব নয়, এটি হল শোকের দিন

হক জাফর ইমাম, মালদা: মহরম কোনও উৎসব নয়, মহরম হল একটি শোকের দিন। আরবি মহরম মাসের ১০ তারিখে ইমাম হুসেন শহিদ হয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবে ধরেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা।মহরম ইসলামি মাস এবং এই মাস থেকেই ইসলাম ধর্মের নতুন বছরের সূচনা হয়। দশম মহরমে হজরত ইমাম হুসেনের স্মরণে শোক উদযাপন বলা হয়। এই দিনটিকে রোজ-এ-আশুরা বলা হয়। এইদিন জুলুস বের করে হুসেনকে স্মরণ করা হয়। দশম মহরমে রোজা রাখারও প্রথা রয়েছে। আরবি মহরম মাসের ১০ তারিখে দিন ইসলামের রক্ষার্থে হজরত ইমাম হুসেন নিজের প্রাণের বলিদান দিয়েছিলেন। এই বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দশম মহরম ১০ সেপ্টেম্বর পড়েছে।ইসলামি ধর্মাবলি মানুষের বিশ্বাস অনুসারে, ইরাকে ইয়াজিদ নামের এক নিষ্ঠুর বাদশাহ ছিলেন। তিনি ছিলেন মানবতার শত্রু। ইয়াজিদ নিজেকে খলিফা মনে করেছিলেন, কিন্তু আল্লাহর প্রতি তাঁর কোন বিশ্বাস ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন হজরত ইমাম হুসেন তাঁর শিবিরে যোগদান করুন। কিন্তু হুসেন এতে সম্মতি জানাননি। তিনি ইয়াজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেন। হুসেইন ও পরিবার, বন্ধুবান্ধবসহ শহিদ হন কারবালায়। এই মহরমের মাসেই তিনি শহিদ হয়েছিলেন।মহরমের মাসে মুসলমানরা শোক পালন করেন ও নিজেদের সব খুশি ত্যাগ করেন। হুসেনের উদ্দেশ্য ছিল নিজে শহিদ হয়ে ইসলাম ও মানবতার রক্ষা করা। মহরম কোনও উৎসব নয়। এটি হল অধর্মের উপরে ধর্মের জয়ের প্রতীক। ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে হজরত ইমাম হুসেন তাঁর পরিবার ও সঙ্গীদের সঙ্গে দ্বিতীয় মহররমে কারবালায় পৌঁছেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছোট ছোট শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধরাও ছিলেন।দশ মহরমের সকালে হুসেন নামাজ পড়েন। তখনই ইয়াজিদের সেনাবাহিনী তির ছুড়তে লাগল। সব বন্ধুরা হুসেনকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন। হুসেন নামাজ পড়া শেষ করেন। এরপর দিন শেষ হওয়ার আগে হুসেনের ৭২ জন সঙ্গী শহিদ হন। এর মধ্যে হুসেনের ছয় মাসের ছেলে আলি অসগর ও ১৮ বছরের আলি আকবরও ছিল। হুসেনের মাথা কেটে ফেলা হয়। কথিত আছে যে হুসেনের ঘাড়ে মাটিতে পড়ে গেলেও তা সেজদার অবস্থায় ছিল।কারবালার যুদ্ধে হুসেনের ছেলে জয়নাল আবেদিন ছাড়া গোটা পুরো পরিবার শহিদ হয়েছিল। মহরম মাসের দশম দিনটিকে আশুরা বলা হয়। এই ঘটনার পরে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা ইসলামিক নববর্ষ উদযাপন বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে মহরম মাস দুঃখের মাসে পরিণত হয়। শিয়া সম্প্রদায়ভুক্তরা দশম মহরমের দিন কালো পোশাক পরে হুসেন ও তাঁর পরিবারের ‘শাহাদাত’কে স্মরণ করেন। হুসেনের শাহাদাতের স্মরণে রাস্তায় একটি শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং শোক উদযাপিত হয়। মহররমের নবম এবং দশম তারিখে, মুসলমানরা রোজা রাখে। মসজিদ ও বাড়িতে নামাজ আদায় করা হয়। পাশাপাশি, সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্তরা মহরম মাসে ১০ দিন পর্যন্ত রোজা রাখে। মহরমের একদিনের পুণ্য ৩০ দিনের সমান।