নিজের দুই মাসের দুধের শিশুর মুখে সেলোটেপ লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন মা। ধৃতের নাম সন্ধ্যা মালো। সাধারণতন্ত্র দিবসের দুপুরে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বেলেঘাটার এক অভিজাত বহুতলে। ঘটনার সূত্রপাত শিশু অপহরণের অভিযোগ দিয়ে। তাকে সত্যি ধরে নিয়েই তদন্তে নেমেছিলেন বেলেঘাটা থানার অফিসার ও লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার গোয়েন্দারা। প্রাথমিক অবস্থায় সন্ধ্যাদেবী পুলিসকে জানিয়েছিলেন, ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। আর পাঁচটা দিনের মতো তাঁর আয়া ছাদে কাপড়-জামা মেলতে গিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময় এক যুবক কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলতেই ওই যুবক তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। সংজ্ঞা হারান তিনি। সেই সুযোগে তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে পালিয়ে যায় সেই যুবক। ভরদুপুরে শিশু অপরহণ! শোরগোল পড়ে যায় পুলিস মহলে। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মা সহ সকলকে। রাতের দিকে ভেঙে পড়েন শিশুর মা। স্বীকার করেন, তাঁর ন’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। ফের সন্তান হওয়ায় তিনি ক্লান্ত। সামলাতে পারছিলেন না। তাই নিজে হাতে খুন করেছেন দু’মাসের শিশুকে। দেহ ফেলে দিয়েছেন সেপটিক ট্যাঙ্কে। এই সাফাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দাদের অনুমান, পোস্ট নেটালজনিত হতাশা থেকেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিসি (ইএসডি)। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, মুখে টেপ জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে দুধের শিশুকে। মৃত্যুর পরও তার গলা টেপা হয়েছিল। তাই গলায় আঙুলের ছাপ মিলেছে। পাশাপাশি শিশুটির মাথায় রক্ত জমার চিহ্নও রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে গোয়েন্দারা বলছেন, খুন থেকে ম্যানহোল খুলে সেপটিক ট্যাঙ্কে দেহ লোপাট— সর্বত্রই পরিকল্পনার ছাপ স্পষ্ট। অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কীসের ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্তে আসছে পুলিস? প্রথমত, খুন ও দেহ লোপাটের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল দুপুর ১২টা ১০ থেকে ১২টা ৫০ মিনিট অর্থাৎ এই ৪০ মিনিট সময়কে। কেন? উত্তরে তদন্তকারীরা বলছেন, স্বামী সুদর্শন মালো কর্মসূত্রে বাইরে। ঘটনার সময় আয়া ছাড়া বাড়িতে কেউ থাকবে না, এটা জানা ছিল সন্ধ্যাদেবীর। কেননা, প্রায় ১৫ দিন আগেই ঠিক ছিল, ২৬ জানুয়ারি দুপুরে সন্ধ্যাদেবীর শ্বশুর-শাশুড়ি পরেশনাথ মন্দিরে যাবেন। ছেলে স্কুলে ছিল। দ্বিতীয়ত, এই সময়টায় বহুতলের নিরাপত্তা রক্ষী মূল ফটক ছেড়ে রান্না করতে যান। ফলে আবাসনের ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে দেহ লোপাট করলেও কেউ দেখতে পাবে না। তৃতীয়ত, ছাদে শিশুর জামা-কাপড় মেলতে গেলে আয়া টুম্পা দাসের কমপক্ষে ৪৫ মিনিট সময় লাগে। তাই এই সময়টাকেই বেছে নিয়েছিলেন সন্ধ্যাদেবী।