হক জাফর ইমাম, মালদাঃ নেশামুক্ত সমাজ গড়তে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছেন মালদা কালিয়াচক-১ ব্লকের ঘাড়িয়ালিচক গ্রামবাসীরা। সচেতনতামূলক প্রচার অভিযান চালানোর পাশাপাশি এবার থেকে মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। স্থানীয় কয়েকটি সমাজের বাসিন্দারা মিলিত হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকেও। মালদা জেলার অর্থনীতিতে কালিয়াচকের প্রভাব অপরিসীম। এই ব্লকের রেশম শিল্প, আম এবং লিচু শিল্পের চাহিদা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে রয়েছে বিদেশেও।এমনকি ভিন জেলা বা রাজ্যে নির্মাণশ্রমিকদের বেশিরভাগই এই ব্লকের। গত কয়েক বছরে শিক্ষাদীক্ষার দিক থেকেও এই ব্লক যথেষ্ট এগিয়েছে। তবে ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার হওয়ার সুবাদে কিছু অসামাজিক কাজকর্মও এই ব্লকের সুনাম অক্ষুন্ন করেছে। সীমান্তে চোরাচালান, জালনোটের কারবারে জড়িয়ে পড়েছে বহু মানুষ। তাদের পেছনে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতাদের হাত থাকায় পুলিশ প্রশাসনও কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন সক্রিয় হয় সমাজবিরোধীদের দমনে। পুলিশি তৎপরতায় বর্তমানে বেআইনি কাজ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও নতুন বিপদ হিসাবে দেখা দিয়েছে মাদকের উপদ্রব। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা উন্নতমানের হেরোইন, ব্রাউন সুগারের মতো নেশার সামগ্রী বেচাকেনা বেড়ে গিয়েছে কালিয়াচকের বেশ কিছু এলাকায়। সমাজের বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই নেশার কবলে পড়লেও যুবসমাজের একাংশ বেশি করে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে নেশায়। বাদ যাচ্ছে না স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা। মারাত্মক এই নেশায় একবার আসক্ত হয়ে পড়লে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। নেশার টাকা জোগাড়ে তখন মাদকাসক্তরা চুরি, ছিনতাইয়ের মতো আসামাজিক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে। কালিয়াচকের সুজাপুর, গয়েশবাড়ি, ঘাড়িয়ালিচক সহ প্রায় বেশির ভাগ গ্রামে অনেক যুবক এই মারণ নেশার ছোবলে আক্রান্ত। তবে আশ্চর্যের বিষয়, কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গা বা দোকান থেকে এই মাদক বিক্রি করা হয় না। মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকাসক্তদের ফোনে দেওয়া ঠিকানায় এই সামগ্রী পৌঁছে দেয়। ফলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে কোনো একটি জায়গায় হানা দিয়ে বেআইনি এই কারবারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে গোপন খবরের ভিত্তিতে বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে মাদক সহ কারবারীদের পুলিশ ধরলেও এই কারবার নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না।তবে নিয়মিত পুলিশি অভিযান চলছে বলে খবর । সমাজ থেকে পোস্ত চাষ ও মাদকের কারবার সমূলে উচ্ছেদ করতে তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কালিয়াচক থানা এলাকায় পোস্ত চাষ বন্ধ হয়েছে ।নেশা মুক্ত সমাজ গড়তে এগিয়ে এসেছে ঘাড়িয়ালিচকের বাসিন্দারা। এলাকার ছয়টি সমাজের বাসিন্দারা আলোচনার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাঁদের এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করতে এবার থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার কোনো যুবক মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে, তাকে চিহ্নিত করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়ে কাউন্সেলিং করে সুস্থ করার চেষ্টা করা হবে। মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে কেউ ধরা পড়লে কোনোরকম আপস করা হবে না। তাকে তুলে দেওয়া হবে পুলিশ প্রশাসনের হাতে।দাবি জানানো হবে কঠোর শাস্তির। যে কোনো মূল্যে কালিয়াচককে মাদকমুক্ত করতে বাধ্য সাধারণ মানুষ। ঘাড়িয়ালিচকের বিশিষ্ট সমাজসেবী এনারুল হক বলেন, শুধু ঘাড়িয়ালিচক নয়, প্রায় সমগ্র কালিয়াচক জুড়েই যেভাবে যুবসমাজের একাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে তা খুবই আতঙ্কের বিষয়। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বহু যুবক বিপথে জড়িয়ে পড়ছে। নেশাসক্ত যুবকদের পরিবারেও লেগে থাকছে অশান্তি। অনেকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাঁদের চিকিৎসা করতে গিয়ে বহু পরিবারকে সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে। পারিবারিক এই সমস্যার প্রভাব পড়ছে সমাজেও। শুধুমাত্র আইনি পথে ভয়ানক এই বিপদ থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। ঘাড়িয়ালিচকের বাসিন্দারা মিলিতভাবে তাই নেশামুক্ত সমাজ গড়তে পুলিশ প্রশাসনকে সবরকমভাবে সাহায্য করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কালিয়াচক-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান খুরশেদ আলি বলেন, নেশার প্রকোপ সমাজের একটি জ্বলন্ত সমস্যা। শুধুমাত্র প্রশাসনের দ্বারা এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। সর্ব স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে ।অন্যদিকে কালিয়াচক ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আতিউর রহামান বলেন,সমাজের প্রচুর ছেলে বিপদগামী হচ্ছে ।ওই সব যুবকদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে ঘাড়িয়ালিচকের সমাজ উদ্যোগ নিয়েছে ।সেই উদ্যোগ কে আমি সমর্থন করছি ।নেশামুক্ত সমাজ গড়তে জন সাধারন কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সভাপতি আতিউর রহমান ।