নয়াদিল্লি: দুপুর দেড়টা থেকে নর্থ ব্লকের প্রথম তলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘরে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য তার মিনিট দশেক আগেই পৌঁছে যান তিনি। সঙ্গে ফুলের তোড়া নিয়ে আসেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়ান। এক গুচ্ছ হলুদ গোলাপ নিয়ে অবশ্য মমতা একাই শাহের ঘরে ঢোকেন।ঘরের ভিতরে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ফটোগ্রাফারের মুহুর্মুহু ঝলকানি। বৈঠকের শুরুতেই একতারা কাগজ অমিত শাহের হাতে তুলে দিতে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। হাসি মুখে দুজনেই বেশ কিছুক্ষণ শুভেচ্ছা বিনিময়ও করেন। কিন্তু এদিনের বৈঠক বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মেরেকেটে ১৫ মিনিটের সাক্ষাৎ। এরপরই বেরিয়ে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আগে যখন দিল্লি আসতাম, তখন তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতাম। তাই এ বারও বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করব। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’ তৃণমূল নেত্রী অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন এই বৈঠক নিতান্তই সৌজন্যমূলক এবং আনুষ্ঠানিক। এ্রর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পরও তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা।’তবে বিরোধীরা সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, রাজনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে এই সাক্ষাৎ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এদিকে, এতদিন পর্যন্ত ফোনে কথা হলেও অমিত শাহের সঙ্গে সামনাসামনি কোনও বৈঠক হয়নি মমতার। রাজ্যপাল নিয়োগের আগে অমিত একবার ফোন করেছিলেন। তার আগে গান্ধীজির দেড়শো বছর পূর্তি অনুষ্ঠান নিয়ে আরেকবার ফোনে কথা হয়েছিল৷ কিন্তু সামনে বসে কথা হয়নি কখনও৷ এদিনের বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেখেছি উনি মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। আমার বিশ্বাস উনি ইতিবাচক ভূমিকা নেবেন।’এদিন এনআরসির পাশাপাশি বাংলায় আন্তর্জাতিক সীমান্তের বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে দু’জনের। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, ‘রাজ্যে বেশকিছু আন্তর্জাতিক সীমান্ত আছে। বাংলাদেশ, ভূটানের মতো দেশের সীমান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ গত পাঁচ বছরে একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছেন। এমনকি লোকসভা ভোটের প্রচারে অমিত শাহের কলকাতায় রোড শো ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতর চরমে ওঠে। ভাঙা হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। যা নিয়ে তৎকালীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে তুলোধনা করে তৃণমূল শিবির। আজ সেই অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে করলেন মমতা। যদিও গতকালই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই সাক্ষাৎ একেবারেই সৌজন্যমূলক। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।প্রসঙ্গত, বুধবার প্রায় আড়াই বছর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ভাল হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে পুজোর পর বাংলায় আসার আমন্ত্রণও জানিয়ে এসেছেন বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা হলেও, মোদির সঙ্গে রাজনীতির বিষয়েও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। সব মিলিয়ে আলোচনা ‘ভাল’ হয়েছে, মমতা এ কথা বলার পরই রাজনৈতিক মহলে নানা কারণে জল্পনার জল গড়াতে শুরু করেছে। মোদির সঙ্গে বৈঠক সেরেই মমতা এদিন জানিয়ে দিয়েছিলেন, আজ বৃহস্পতিবার তিনি রাজধানীতেই থাকছেন এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।