মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, যাঁদের সংক্রমণ প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তাঁরা সুবিধা থাকলে বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকুন। মঙ্গলবার সেই একই কথা বলল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করে মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, কারও শরীরে সংক্রমণের মৃদু উপসর্গ থাকলে বা করোনা পজিটিভ হলেও উপসর্গ পুরোপুরি দেখা না গেলে তাঁরা বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকুন। এতোদিন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও আইসিএমআর-এর গাইডলাইন ছিল, কারও শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেলে দ্রুত তাঁকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আইসোলেশনে পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিন ধরনের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কথা বলা হয়েছিল। যাঁদের শরীরে কোভিড পজিটিভ রয়েছে, কিন্তু তেমন সমস্যা বা উপসর্গ নেই তাঁদের রাখতে হবে কোভিড কেয়ার সেন্টারে। যাঁদের মেডিকেল সাপোর্ট বা অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে, তাঁদের পাঠাতে হবে কোভিড হেল্থ কেয়ার সেন্টারে। আর যাঁদের অবস্থা সংকটজনক, তাঁদের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বক্তব্য ছিল, মাত্র ২০ শতাংশ রোগীর অবস্থা সংকটজনক হচ্ছে। তাই সবাইকে কোভিড হাসপাতালে না পাঠিয়ে উপসর্গ অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করা হোক। তাতে কোভিড হাসপাতালের উপর চাপ কমবে।
সেই গাইডলাইনে অনুযায়ী দেখে নেওয়া যাক, কাদের হোম আইসোলেশনে রাখা যেতে পারে এবং তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা নিতে হবে ?
১) কোনও রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেলেও চিকিৎসকরা যাঁদের উপসর্গকে মৃদু বা প্রি-সিম্পটোম্যাটিক বলে চিহ্নিত করবেন, তাঁরা হোম আইসোলেশনে থাকতে পারেন।
তবে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
২) আইসোলেশনে থাকা ওই রোগীকে দেখভালের জন্য ২৪ ঘন্টা একজন আয়া বা কেয়ারগিভারের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই আয়া বা কেয়ার গিভার হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন।
৩) ওই কেয়ারগিভার বা আয়া এবং রোগীর সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবাইকেই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী হাইড্রক্সিক্লোরোক্যুইন প্রফিল্যাক্সিস ওষুধ খেতে হবে।
৪) আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করে তার ব্লুটুথ ও ওয়াইফাইন সর্বদা অন করে রাখতে হবে।
৫) রোগীর শারীরিক অবস্থা কী সে ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নিয়মিত আপডেট পাঠাতে হবে।
৬) রোগী যে হোম আইসোলেশনে থাকতে চাইছেন সে ব্যাপারে তাঁকে লিখিত দিতে হবে। এবং কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মেনে চলতে হবে।
রোগী এবং কেয়ারগিভারদের কখন সতর্ক হতে হবে?
সামান্য উপসর্গ বা প্রিসিম্পটোম্যাটিক রোগী হলেও একটা পর্যায়ের পরে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, রোগীর শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন। শুধু রোগীই নয় তাঁর পরিচর্চার দায়িত্বে যিনি রয়েছে সেই আয়া বা কেয়ারগিভারদেরও একইভাবে সতর্ক হতে হবে। কারণ রোগীদের কাছাকাছি থেকে তাঁদের দেখাশোনা করছেন যাঁরা, তাঁদের শরীরে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
কোন কোন উপসর্গ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে –
১) শ্বাসের সমস্যা। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে যদি বেশি সমস্যা হয়, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় তাহলে সতর্ক হতে হবে।
২) বুকে ব্যথা, পেশিতে যন্ত্রণা
৩) মানসিক যে কোনও সমস্যা, স্ট্রেস, ঘুমের সমস্যা অথবা অবসাদ
৪) মুখ ও ঠোঁটের রঙে বদল, নীলচে ছোপ
এই সমস্ত উপসর্গ দেখা দিলেই স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পরামর্শে ল্যাব টেস্ট করানো জরুরি। উপসর্গ বেশিমাত্রায় হলে হোম-আইসোলেশনের বদলে তখন রোগীকে তার শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কোভিড হাসপাতালে বা হেলথ কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করতে হবে।