বিতর্কিত জমি দেওয়া হল হিন্দুদের। মসজিদ নির্মাণের জন্য অযোধ্যাতেই ৫ একর বিকল্প জমি দেওয়ার নির্দেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত। মন্দির নির্মাণের জন্য আগামী তিন মাসের ভেতর প্রকল্প তৈরি করে মন্দির নির্মাণের জন্য ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
অবশেষে তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ জন বিচারপতির বেঞ্চ। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে দু’পক্ষের সওয়াল ও দাবির প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, অযোধ্যায় বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমির মালিকানা আপাতত যাবে সরকারের হাতে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট বা অছি পরিষদ গঠন করে সেই জমির মালিকানা তাদের হাতে তুলে দেবে। সেই সঙ্গেই অযোধ্যায় বিতর্কিত জমির থেকে দূরে মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি দিতে হবে সরকারকে। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা আসতে সময় লাগবে। তবে এখনও পর্যন্ত মোটামুটি ভাবে যা পরিষ্কার তাতে বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমিতে মন্দির নির্মাণের পক্ষেই রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছে, প্রস্তাবিত ওই ট্রাস্টের মধ্যে প্রভাবশালী থাকবে হিন্দু গোষ্ঠীগুলিই। যেমন, নির্মোহী আখাড়াকে ওই ট্রাস্টের সদস্য করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তা ছাড়া রাম জন্মভূমি ন্যাস কমিটির ভূমিকাকেও গুরুত্ব দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। অযোধ্যায় জমির মালিকানা দাবি করে অতীতে মামলা করেছিল নির্মোহী আখাড়া। একই ভাবে পাল্টা দাবি জানিয়েছিল, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড। কিন্তু রায় ঘোষণার আগে এই দুই পক্ষের দাবি খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। তার পরই বিতর্কিত জমির মালিকানা আপাতত সরকারের হাতে দেওয়ার রায় দেন বিচারপতিরা। সেই সঙ্গে বলেন, তিন মাসের মধ্যে ট্রাস্ট গঠন করতে হবে সরকারকে। পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমিও চিহ্নিত করতে হবে। এ দিন রায় ঘোষণার আগে পুরাতত্ত্ব বিভাগের সাক্ষ্য ও প্রমাণের কথা বিশদে তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, পুরাতত্ত্ব বিভাগ স্পষ্ট করে জানিয়েছে, অযোধ্যায় মসজিদ খালি জমির উপর নির্মিত হয়নি। তার আগে একটি কাঠামো সেখানে ছিল। তবে সেই কাঠামো আদৌ মন্দির ছিল কিনা তা স্পষ্ট করে বলেনি পুরাতত্ত্ব বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এও বলেন, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড জমির মালিকানা চেয়ে যে যুক্তি দিয়েছিল তার কোনও ভিত্তি পাওয়া যায়নি। মসজিদটি বাবরই বানিয়েছিলেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। আইনজ্ঞদের মতে, পুরাতত্ত্ব বিভাগের মতকেই প্রাধান্য দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সেই সঙ্গে এমন ভাবে ভারসাম্য রেখে রায় দিতে চেয়েছে যাতে দুই সম্প্রদায়ের ভাবাবেগকেই মর্যাদা দেওয়া যায়। সেই কারণেই বিতর্কিত জমির মালিকানা সরকারের হাতেই আপাতত তুলে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।