গরিব মানুষকে দুবেলা খেতে দিলে বিশেষ খরচ হবে না সরকারের। বলছেন অর্থনীতিবিদ তথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। পাশাপাশি সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন–জীবিকার ভার গ্রহণ করা, পরামর্শ রাজনের। তিনি বলছেন, এখন রাজকোষ ঘাটতির কথা ভাবলে চলবে না। দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গরিব লোকে যাতে দু’বেলা খেতে পায়, তাঁরা যাতে সুস্থ থাকে, সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। একসময়ে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাষ দিয়েছিলেন তিনি। এবার তিনি জানাচ্ছেন, ভারত যদি এই মুহূর্তে দেশের প্রকৃত অর্থনীতির স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ জোর না দেয়, তাহলে অনেক বড় মূল্য চোকাতে হবে সাধারণ মানুষকে। আগামী ৩ মে লকডাউনের দ্বিতীয় পর্বের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তারপর আবার মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজন বলছেন, দেশে বেশিদিন লকডাউন জারি রাখা যাবে না। এখন সাধারণ মানুষের জীবন–জীবিকার ওপর দৃষ্টি ঘোরানো খুব জরুরি। লকডাউনের জেরে এই অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে এখন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি বাজার বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার উড জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের জেরে সাধারণ মানুষ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার চেয়ে আরও বড় বিপদ ডেকে আনবে ভারতের অর্থনৈতিক সঙ্কট। অর্থনীতিকে বাঁচাতে যথেষ্ট ত্রাণ দিচ্ছে না বলে মোদি সরকারের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রকে জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। তবে এবিষয়ে রঘুরাম রাজন জানিয়েছেন, আর্থিক প্যাকেজ নির্ধারণ করার সময়ে কেন্দ্রকে মাথায় রাখতে হবে, তা যেন টাকার মূল্য বা সুদের হারে কোনও প্রভাব না ফেলে। আর্থিক প্যাকেজের কাঠামো এমন ভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে কোথাও কেউ অভুক্ত না থাকেন। প্রত্যেকে যাতে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ পান। দেশের প্রকৃত অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে ছোট–মাঝারি কোম্পানিগুলোকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে, বলছেন তিনি। ছোট–মাঝারি কোম্পানিগুলির পায়ের তলার জমি যাতে আবার শক্ত হয়, তার জন্য সরকারের উচিত অর্থ সাহায্য করা। প্রয়োজনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক টাকা ধার করুক। কিন্তু বাজারে যাতে নগদ অর্থের জোগান বাড়ে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের জেরে এখন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও পিছিয়ে আসতে চাইবে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ঋণ না দিয়ে তারা নগদ অর্থ মজুত করতে চাইবে। সুদের হার যত কমই হোক না কেন! আরবিআই নিজে টাকা ধার দিতে পারবে না। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দিতে বাধ্য করতে পারে। এখন সেটা আবশ্যক। পাশাপাশি আর্থিক অবস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে রাজন বলছেন, কোম্পানিগুলি যাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে না যায়, সেটা খেয়াল রাখা। মানুষের আয়ের পথ খোলা থাকলেই বাজারে চাহিদা বাড়বে।