ব্যারাকপুর: কাঁচড়াপাড়া, হালিশহরের পরে এবার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের গারুলিয়া পুরসভাও বিজেপির হাতছাড়া হল। অনাস্থা ভোটের আগেই পরাজয় মেনে নিয়ে সোমবার দুপুরে পুর চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন সুনীল সিং। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই পুজো উদ্বোধনে কলকাতায় আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার আগেই গারুলিয়া পুরসভা হাতছাড়া হওয়া পদ্ম শিবিরের পক্ষে বড় ধাক্কা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়ের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গারুলিয়া পুরসভা পদ্ম শিবিরের বেদখল হয়ে যাওয়াকে অশনি সংকেত হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।গত লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে অর্জুন সিং জেতার পরেই গোটা শিল্পাঞ্চল জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। কাঁচড়াপাড়া, হালিশহর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে গত জুন মাসে বিজেপিতে নাম লেখান গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তথা নোয়াপাড়ার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক সুনীল সিং। যিনি পারিবারিক জীবনে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের ভগ্নিপতি। সুনীলের সঙ্গেই দিল্লিতে গিয়ে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন গারুলিয়া পুরসভার আরও ১১ কাউন্সিলর। ফলে ২১ আসন বিশিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ট হয়ে গারুলিয়া পুরসভার দখল নেয় বিজেপি। যদিও তৃণমূল জেলা নেতৃত্বের পক্ষ থেকে তখন অভিযোগ করা হয়েছিল, ‘ভয় দেখিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরদের জোর করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ানো হয়েছে।’কিন্তু মাস দুয়েক কাটতে না কাটতেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। প্রথমে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংয়ের দাদা চন্দ্রভান সিং। পরে ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত মুখোপাধ্যায় সহ আরও তিন তৃণমূল কাউন্সিলরের ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটে। ফলে ২১ ওয়ার্ড বিশিষ্ট পুরসভায় তৃণমূলের শক্তি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩। সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পেয়ে চেয়ারম্যান সুনীল সিংয়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। পুরসভা দখলে রাখতে সুনীলের পাশাপাশি ময়দানে নেমেছিলেন অর্জুন সিং-ও। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। অনাস্থা ভোটে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে এদিন দুপুরে রণে ভঙ্গ দিয়ে চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেন সুনীল সিং।চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই নব্য বিজেপি সুনীল সিং জানিয়েছেন, ‘পুর এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে যিনিই নতুন চেয়ারম্যান হোন না কেন, তাঁকে সহযোগিতা করবেন।’ আর তার সেই মন্তব্য নিয়েই রাজনৈতিক মহলে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে।