কলকাতা জেলা বিবিধ

ফিরে দেখাঃ ২০১৯-এর রাজ্য রাজনীতি

শেষ হতে চলল ২০১৯ সাল ৷ বছরের শুরু থেকেই রাজ্য রাজনীতি ছিল ঘটনার বৈচিত্র পূর্ণ৷ রাজ্যে বিকল্প শক্তি হিসেবে বাম ও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে উঠে এসেছে বিজেপি-র নাম৷

২০১৯ সালে রাজ্য সারা ফেলা কিছু রাজনৈতিক ঘটনা একনজরে দেখে নেওয়া যাক –

৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মেট্রো চ্যানেলে ধরনায় বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সারদা কেলেঙ্কারিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজীব কুমারের বাসভবনে যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ৷ এরপরই এই জিজ্ঞাসাবাদ কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেট্রো চ্যানেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধরনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী ৷

১১ জুন ২০১৯ নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখোপাধ্যায়ের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় সরগরম হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি । দেশজুড়ে আন্দোলনে নামে ডাক্তাররা। রাজ্যের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্য হাসপাতালগুলিতেও শিকেয় ওঠে পরিষেবা। দুর্ভোগে পড়ে রোগীরা । অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

১৪ মে ২০১৯ অমিত শাহর উপস্থিতিতে রাহুল সিনহার প্রচারের সময় কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর। প্রকাশ্য সড়কে বিজেপি-তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনায় দুই দল একে অপরের দিকে দোষ চাপায়।

২৩ মে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে অভূতপূর্ব ফল করে বিজেপি ৷ ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি দখল করে তারা । ২টি আসন পায় কংগ্রেস । খাতাই খুলতে পারেনি বামেরা ।

২১ জুন ২০১৯ লোকসভায় দলের ভরাডুবির পর স্ট্রাটেজি মেকার প্রশান্তকে নিয়োগ করে তৃণমূল কংগ্রেস।

১০ জুলাই ২০১৯ একাধিক প্রকল্পের টাকা (কাটমানি) সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে জেলা, ব্লক, গ্রাম স্তরের অনেক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । জায়গায় জায়গায় ঘেরাও ও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলের অনেককেই । কাটমানিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করে বিজেপি। অস্বস্তিতে পড়তে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে ।

২৯ জুলাই ২০১৯ জনসংযোগ বাড়াতে দিদিকে বলো কর্মসূচি নেয় তৃণমূল কংগ্রেস । যা রাজ্যজুড়ে সাড়া ফেলে দেয় । ১৩ আগস্ট ২০১৯ অনুযায়ী প্রায় 5 লাখ মানুষ দিদিকে বলো প্রকল্পে অভিযোগ জানান । তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রশান্ত কিশোর এই কর্মসূচির প্রবক্তা ।

৩০ জুলাই ২০১৯ রাজ্যপাল দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে একাধিক ইশুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলাসহ একাধিক বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। রাজ্যপালকে পালটা আক্রমণ করেন তৃণমূল বিধায়করাও। রাজ্যপাল পদের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। সিএএ ও এনআরসি নিয়ে রাজ্যের একাধিক জায়গায় অশান্তির পর রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত আরও বড় মাত্রা পায়। এরইমধ্যে যাদবপুরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা । তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপালের গাড়ি ঘেরাও করে। রাজ্যপাল ফিরে আসেন। তাঁকে ছাড়াই হয় সমাবর্তন।

১৮ অগস্ট মাসে দিদিকে বলো কর্মসূচির প্রায় একই সময় চায়ে পে চর্চা শুরু করেন তৃণমূলের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। জনসংযোগ বাড়াতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ যাদবপুরে ABVP-র একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে হেনস্থার শিকার বাবুল সুপ্রিয় । বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের একাংশ তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ । টানা কয়েকঘণ্টা বাবুলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘেরাও থাকতে হয় । অবশেষে আচার্য তথা রাজ্যপাল তাঁকে উদ্ধার করেন ।

২৫ নভেম্বর ২০১৯ বিধানসভা উপনির্বাচনে করিমপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের উপর চড়াও হয় একদল দুষ্কৃতী, লাথি মারে ৷ এরা তৃণমূলের বলে অভিযোগ করে বিজেপি ৷ জয়প্রকাশকে লাথি মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়ার এই ভিডিয়ো ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায় ৷

২৮ নভেম্বর ২০১৯ তিন বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলঘোষণা হয় ৷ পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর সদর, নদিয়ার করিমপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে ৷ তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূল জয় লাভ করে ৷

৯ ডিসেম্বর ২০১৯ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রবল বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় । কোনওভাবেই এই আইন লাগু করতে দেবেন না। সাফ জানিয়ে দেন তিনি। আইনের প্রতিবাদে কলকাতায় একাধিক মিছিল ও সভা করেন। জন আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন । তৃণমূলের পাল্টা মিছিল করে বিজেপি-ও ।

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হওয়ার পর প্রতিবাদের নামে মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায় শুরু হয় তাণ্ডব । রেল লাইন, স্টেশন ও ট্রেনে ভাঙচুর চালানো হয় । হিংসা রুখতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় প্রশাসন । অশান্তির জন্য তৃণমূলকে দায়ি করে বিজেপি। কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সৌমিত্র খাঁ, খগেন মুর্মু, নিশীথ প্রামাণিকসহ একাধিক নেতা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ । যা নিয়ে ফের শুরু হয় আক্রমণ পালটা আক্রমণের পালা।