কলকাতা

ডঃ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি সহ ১৫ জায়গায় তল্লাশি, নামবিভ্রাটের জেরে ভুল জায়গায় সিবিআই হানা

যাওয়ার কথা ছিল ‘তারা মা ট্রেডার্সে’। পরিবর্তে রবিবার সাতসকালে ‘তারা মা বিল্ডার্সে’র দোকানে হাজির সিবিআই আধিকারিকরা। আর জি করে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে রবিবার সকালেই শুরু হয়েছে ধারাবাহিক অভিযান। সন্দীপ ঘোষের বেলেঘাটার বাড়ি তো বটেই, তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং দুর্নীতির অভিযোগে জড়িত থাকতে পারেন, এমন অনেকের ডেরাতেই এদিন সকালে একযোগে হানা দেয় সিবিআই। সেই সূত্রেই চিরকুটে নাম ছিল সন্দীপ-ঘনিষ্ঠ হাওড়ার সাঁকরাইলের বাসিন্দা বিপ্লব সিংহের। সেই লক্ষ্যেই সাঁকরাইল পৌঁছে যায় সিবিআইয়ের টিম। কিন্তু একে অদৃষ্টের ফের বলা যায়, নাকি নামের ফের? ‘তারা মা’ দেখেই তারা ঢুকে পড়ে বিল্ডার্সে। বাণীপুর লাইব্রেরি মোড় এলাকায় সে এক ইমারতি সামগ্রীর দোকান। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ খোদ সিবিআইকে চোখের সামনে দেখে মদন পাড়ুইয়ের তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার জোগাড়। নিজেদের পরিচয় দিয়ে দোকান মালিকের নাম জানতে চান তাঁরা। দেখতে চান কাগজপত্রও। এতজন গোয়েন্দা, সঙ্গে আবার কেন্দ্রীয় বাহিনী। দোকানের বাইরে ভিড় জমে যায়। প্রায় ঘণ্টাখানেক সব খতিয়ে দেখার পর তাঁদের বোধ হয়, ভুল হয়ে গিয়েছে। অন্য ঠিকানায় এসে পড়েছেন তাঁরা। মদনবাবুর কাছে রীতিমতো ক্ষমা চেয়ে বেরিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তারা মা বিল্ডার্সের মালিক বলেন, ‘ট্রেডার্সের বদলে আমার দোকানে চলে এসেছিলেন। দোকানের কাগজপত্র দেখিয়ে ভুল ভাঙাই। নামবিভ্রাটেই এমনটা হয়েছে। তবে ওঁদের ভুলের জন্য আমাকেও যেভাবে বিদ্রুপের মুখে পড়তে হল, তার বিচার কে করবে?’ মদনবাবুর ছেলে সৌমেন্দু পাড়ুই বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা এখানে ব্যবসা করছি। সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিই। তাই সিবিআই দেখে প্রথমে খানিকটা হচকচিয়ে গিয়েছিলাম।’ লাইব্রেরি মোড় থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে হাটগাছা এলাকা। সেখানেই বাড়ি ‘তারা মা ট্রেডার্সে’র মালিক বিপ্লব সিংহের। মদনবাবুর দোকান থেকে বেরনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য সিবিআই অফিসাররা বিপ্লবের বাড়ি খুঁজে পান। সিবিআইয়ের দাবি, এই ডেরা থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে এসেছে তাদের। তালিকায় যেমন রয়েছে ভুয়ো টেন্ডারের কাগজপত্র, তেমনই রয়েছে গোলমেলে বিলও। সেই সবই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বাজেয়াপ্ত করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। একইসঙ্গে এদিন প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, প্রাক্তন সুপারের বাড়ি সহ মোট ১৫ জায়গায় হানা দেয় সিবিআই। সেখান থেকে লেনদেনের বেশকিছু নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি এজেন্সির। 
আর জি কর কাণ্ডে তদন্তের মূল অভিমুখ যে অনিয়মের দিকে ঘুরে গিয়েছে, তা এদিনের হানায় আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও সিবিআইয়ের মুখ পুড়িয়েছে সাঁকরাইলের নামবিভ্রাট। এর আগেও রেশন দুর্নীতির তদন্তে চুঁচুড়ায় ভুল ঠিকানায় হানা দিয়েছিল তারা। সে নিয়ে কম তোলপাড় হয়নি। এবার হাওড়ার সাঁকরাইল। এদিনের ‘কাণ্ডে’ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সিবিআইয়ের থেকে এই ধরনের ভুল কাম্য নয়। এলাকার ব্যবসায়ী হারাধন দাস বলেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তদন্তে এসে সিবিআই এই ধরনের ভুল করতে পারে? ভাবাই যায় না। এতে এলাকার সুনাম নষ্ট হয়েছে। অনেকেই এখন ফোন করে আমাদের কাছে আসল ঘটনার কথা জানতে চাইছেন। তাছাড়া যিনি বৈধভাবে ব্যবসা করছেন, এতে তো তাঁরও সম্মানহানি হল!’