কয়লা পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিকবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দুইবার হাজিরাও দিয়েছেন অভিষেক। কিন্তু এক ছেলে ও এক মেয়ের মা রুজিরার পক্ষে এই কোভিডকালে বার বার দিল্লি গিয়ে হাজিরা দেওয়া যে সম্ভব নয় সেটা একাধিকবার জানানো হয়েছিল দিল্লি হাইকোর্টে। কিন্তু সেই আবেদন কানে তোলেনি দিল্লি হাইকোর্ট। তার জেরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। অভিষেক আগেই জানিয়েছিলেন, বার বার তাঁর পক্ষে যেমন ইডি’র জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে দিল্লি ছুটে আসা সম্ভব নয় তেমনি রুজিরার পক্ষেও তা অসম্ভব। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইডি কলকাতায় তাঁদের বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাক। দিল্লি হাইকোর্টে অভিষেকের তরফেও সেই একই কথা জানানো হয়েছিল। তারপরেও দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল দিল্লিতে ইডি’র কার্যালয়েই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দিতে হবে অভিষেক ও রুজিরাকে। তার জেরেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন অভিষেক। সেই মামলারই শুনানি ছিল এদিন। সেখানেই অভিষেকের আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বালের সাওয়াল শোনার পরেই ইডিকে কড়া ভর্ৎসনা করে দেশের শীর্ষ আদালত। সওয়াল জবাবের মাঝে আরও একটি বিষয় উঠে আসে। কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক এবং রুজিরা অভিযুক্ত নাকি সাক্ষী হিসেবে জেরা করা হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট নয় বলে মত দিয়েছে আদালত। আর তাতে আরও বিপাকে পড়েন ইডি’র আধিকারিকেরা।
জানা গিয়েছে, সিব্বালের কথা শুনেই সাওয়ালের মাঝেই আদালতের কড়া প্রশ্ন ধেয়ে আসে ইডি’র কাছে। আদালত জানতে চায়, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে সমস্যা কোথায়? কেন বারবার দিল্লিতে ডাকা হচ্ছে তাঁদের?’ সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু এদিন দিতে পারেননি ইডি’র কোনও আধিকারিক বা তাঁদের আইনজীবী। উল্টে তাঁরা জবাব দিতে কিছু সময় চেয়ে নেন আদালতের কাছে। এরপরেই এদিন আদালত জানিয়ে দেয়, মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ মে। এই মধ্যবর্তী সময় এনফোর্সেন্ট ডিরেক্টরেট অভিষেক-রুজিরার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না। ঘটনাচক্রে এদিন শুনানির সময়ে ইডি-র কৌঁসুলি তথা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু আদালতকে জানান, ‘গত বছর মে মাসে নারদ মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে নিজাম প্যালেসের দফতরে এনেছিল সিবিআই। সে সময় উত্তেজিত জনতা নিজাম প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। অভিযুক্তরা প্রভাবশালী হওয়ায় সিবিআই অফিসারদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও অভিযুক্ত খুবই প্রভাবশালী।’ এরপরেই ইডি’র তরফে রাজু আদালতে আবেদন জানান যে, সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক যাতে অভিষেক ও রুজিরাকে কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে যেন ইডি বা তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে কলকাতা পুলিশ। তারপরেই আদালতের তরফে ইডিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কলকাতায় অভিষেক-রুজিরার কর্মস্থলে গিয়ে জেরা করতে। প্রয়োজন হলে তাঁরা কলকাতা পুলিশের সহযোগিতাও নিতে পারেন।