টেলি অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্যমৃত্যু। রবিবার সকালে তাঁর গড়ফার বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় অভিনেত্রীকে। তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। কী কারণে এই মৃত্যু, তা নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশায় পুলিশ। পুলিস সূত্রের খবর গত দেড় বছর ধরে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন পল্লবী। গতকাল রাতে আলাদা আলাদা ঘরে ঘুমান তিনি ও তাঁর লিভ-ইন পার্টনার। সকালে উঠে পল্লবীর লিভইন পার্টনার দেখেন যে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। লক হোল দিয়ে তিনি দেখতে পান, গলায় বেডশিট দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছেন অভিনেত্রী। সেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে, সেখানেই মৃত ঘোষণা করা হয় অভিনেত্রীকে। যদিও ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। পল্লবীর দেহে কোনও ক্ষতের চিহ্ন নেই। অভিনেত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না সহ অভিনেতা ও ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা। পল্লবীর বন্ধু সায়ক চক্রবর্তী বলেন, ‘পল্লবীর সঙ্গে ওর বয়ফ্রেন্ডের সমস্যা ছিল।
কী প্রবলেম ছিল জানি না। শুধু জানি ও খুব ভালো মেয়ে এটা করতে পারে না। ওদের দুজনের মধ্যেই সমস্যা ছিল। দুদিন আগে আমরা একসঙ্গে খেতে গিয়েছিলাম, সেদিন সমস্যার কথা বলছিল,ও কাঁদছিল। আমি বলেছিলাম তোরা একসঙ্গে না থাকতে পারলে ব্রেকআপ করে নে। ওর এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।’ ভরত কল বলেন,’গত পরশু অবধি আমরা একসঙ্গে শুট করেছি। ওকে দেখে কখনও মনে হয়নি এরকম কিছু করতে পারে। খুবই প্রাণবন্ত মেয়ে ছিল। কাজে কখনও খামতি দেখা যায়নি। গত ১২ তারিখ আমার মেয়ের জন্মদিনেও গিয়েছিল, অনেকক্ষণ ছিল। কিছুই বুঝতে পারিনি।’ অভিনেত্রীর অকালপ্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে টলিউডে ৷ তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। উল্লেখ্য, টেলিভিশনে বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন পল্লবী ৷ বাংলা ধারাবাহিক রেশমঝাঁপিতে তাঁর চরিত্র দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল ৷ তবে নায়িকার ভূমিকায় তাঁর প্রথম অভিনয় ‘আমি সিরাজের বেগম’-এ ৷ সেখানে সুপ্রিয়া চৌধুরীর নাতি শন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পল্লবী ৷ সিরাজের বেগম লুৎফান্নিসার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করে নেন তিনি ৷ তাঁর অভিনীত কুঞ্জছায়াও জনপ্রিয় ধারাবাহিক ৷ বর্তমানে ‘মন মানে না’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছিলেন পল্লবী ৷ এরই মধ্যে এল এই দুঃসবাদ ৷ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করছে পুলিশ। টেলি অভিনেত্রী পল্লবী দে’র রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় টলিউডের অন্যান্য কলাকুশলী এবং পল্লবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে চান তদন্তকারী আধিকারিকরা । ইতিমধ্যেই মৃত অভিনেত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । তাছাড়াও পল্লবীর বন্ধুদের নামের তালিকাও তৈরি করে ফেলেছেন গড়ফা থানার তদন্তকারীরা । পল্লবীর ই মেইল, ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ভালো ভাবে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা । ফেসবুক পোস্ট, ই-মেইল এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট পড়ে অভিনেত্রীর শেষ কয়েক দিনের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা । যদিও এ বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কলকাতা পুলিশের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিক ।ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই গড়ফা থানায় যান কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা । পল্লবীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুট করেছেন অভিনেত্রী । সম্পর্কের টানাপোড়েন নাকি মানসিক অবসাদ গ্রাস করেছিল অভিনেত্রীকে ? এই সব বিষয় পরিষ্কার হওয়ার জন্য এ বার অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠ অন্যান্য সহকর্মী এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারী আধিকারিকরা ।