প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর পানিহাটির প্রিন্টিং ব্যবসায়ীর মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয় শ্রীরামপুরের একটি জলাশয় থেকে ৷ মৃত ব্যবসায়ীর বাবা-মা প্রথম থেকেই তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছিলেন ৷ এবার সেই ঘটনার কিনারা করল পুলিশ ৷ গ্রেফতার করা হয়েছে মৃতের স্ত্রী, তার বান্ধবী ও স্বামীকে ৷ বিয়ের পর ১ মে স্ত্রীকে আনতে শ্বশুরবাড়ি যান শুভজ্যোতি বোস ৷ পরের দিনই বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর ৷ কিন্তু তারপর থেকে বাড়ি না ফেরায় ১৬ দিনের দিন তাঁর পরিবারের তরফে পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় ৷ অন্যদিকে ২ মে শ্রীরামপুরে রাজ্যধরপুরে দিল্লি রোডের একটি নর্দমা থেকে গলাকাটা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । দেহের সঙ্গে মাথা না থাকায় চিহ্নিত করতে অসুবিধায় পড়েন পুলিশ আধিকারিকরা ৷ তদন্ত শুরু করে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ । প্রথমদিকে পুলিশ কোনও হদিশ না পেলেও, পরে খড়দা থানায় ১৮ মে শুভজ্যোতির পরিবারের তরফে দায়ের করা নিখোঁজ ডায়েরির সঙ্গে কোনওভাবে মিল খুঁজে পায় পুলিশ ৷ শুভজ্যোতির হাতের ট্যাটু দেখে তাঁর দেহ শনাক্ত করে পরিবার । এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ যুবকের নাম শুভজ্যোতি বোস (৩১) । উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির সুভাষ রোডের বাসিন্দা । ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হওয়ার পর উত্তরপাড়ার বাসিন্দা চন্দনা চট্টোপাধ্যায় ওরফে পূজার সঙ্গে গত ১৩ মার্চ বিয়ে হয় শুভজ্যোতির । বিয়ের কয়েকদিন পর পূজা তার বান্ধবীর বাড়ি উত্তরপাড়ায় চলে আসে । তারপর থেকে মাঝে মধ্যেই উত্তরপাড়ায় আসত শুভজ্যোতি । ১ মে কোন্নগরে ডাকা হয় শুভজ্যোতিকে । সেখানে পূজার বান্ধবী শর্মিষ্ঠার স্বামী সুবীর আর শুভজ্যোতি মদ খায় ধারসার কাছে একটি ইটভাটায় । এরপর চপার
দিয়ে তাঁর গলা কেটে গঙ্গায় ফেলে দেয় সুবীর । মৃতেদহ প্লাস্টিকে মুড়ে ট্রলি ভ্যানে চাপিয়ে শ্রীরামপুরে দিল্লী রোডের ধারে সেইল কারখানার পাঁচিল ঘেঁষা নর্দমায় ফেলে দেয় । পরদিন অর্থাৎ ২ মে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে । কিন্তু মুন্ডু না থাকায় ধন্দে পড়ে যান তদন্তকারীরা । আইসি শ্রীরামপুর দিব্যেন্দু দাসের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয় । আইসির সঙ্গে এসআই সৌমেন নাথ ও অনিমেষ হাজারি তদন্ত শুরু করেন । খড়দা থানা থেকে খবর পেয়ে শ্রীরামপুর মর্গে এসে ট্যাটু দেখে ছেলেকে চিনতে পারেন শুভজ্যোতির বাবা ধ্রুবজ্যোতি বোস । এরপরেই পুলিশ উত্তরপাড়ায় তল্লাশি চালিয়ে রবিবার শুভজ্যোতির স্ত্রী পূজা ও তার বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে আটক করে । তাদের জেরা করে সুবীর অধিকারীকে গ্রেফতার করে । মঙ্গলবার তিনজনকেই শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হবে । এই বিষয়ে শ্রীরামপুর থানায় চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অরবিন্দ আনন্দ বলেন, “খুনের প্রাথমিক মোটিভ জানা গিয়েছে । পূজার বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে কু-প্রস্তাব দেওয়াতেই খুনের পরিকল্পনা করে তিনজন । সুবীর তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক মানতে পারত না । তাই বরানগর থানাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল সে । চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একজন শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় তাকেও চপার দিয়ে কুপিয়ে ছিল সুবীর । ঘটনাক্রমে যুবক বেঁচে গেলেও সুবীর জেল খাটে । গত মাসে জেল থেকে ছাড়া পায় পেশায় গাড়ি চালক বৈদ্যবাটির সুবীর । একইভাবে শুভজ্যোতি শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় তাকেও খুন করে সুবীর ৷ শর্মিষ্ঠা ও তার স্বামীকে নিয়ে নিজের স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করে পূজা ৷ তার ফলেই এই ঘটনা ৷” তদন্তে নেমে জানা যায়, পূজা আর শর্মিষ্ঠা দু’জনেই যৌনকর্মী । পেশার তাগিদে অনেক সময় বাইরে থাকত পূজা । দিঘা, তারাপীঠ হামেশায় যেত । সেই কারণে বিয়ের পরপরই পূজা শুভজ্যোতিকে ছেড়ে উত্তরপাড়ায় শর্মিষ্ঠার ভাড়া বাড়িতে থাকত । তার পেশা নিয়ে স্বামী শুভজ্যোতির সঙ্গে কোনও অশান্তি ছিল কি না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।