বিজেপির দুই মুখপাত্রের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে এবার বাংলায় অবরোধ বিক্ষোভ শুরু হল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাওড়া জেলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গায় অবরোধ শুরু হয় যা দুপুরের পরেও বজায় থাকে। আর সেই অবরোধের জেরে জাতীয় সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ চূড়ান্ত ভোগান্তির মুখে পড়েন। তার জেরেই এদিন দুপুরে নবান্ন থেকে এক সাংবাদিক বৈঠকের মাধ্যমে এই অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে যখন প্রতিবাদ তখন বাংলায় কেন অবরোধ? দিল্লির সরকারের বিরুদ্ধে যখন রাগ বিক্ষোভ তখন বাংলায় কেন অবরোধ? যারা অবরোধ করছেন তাঁরা দিল্লি বা বিজেপি শাসিত রাজ্যে গিয়ে অবরোধ করুন না। আমাদের সমর্থন থাকবে। কিন্তু আমরা এখানে শান্তি চাই। বিজেপি অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই ফাঁদে কেন আপনারা পা দিচ্ছেন। এদের তো মানুষ আপনাদের ভুল বুঝছে। আমার অনুরোধ অবরোধ তুলে নিন।’ বিজেপির মুখপাত্রদের কু-মন্তব্যের বিরুদ্ধে এদিনই টুইট করে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন মমতা। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বিজেপির কিছু সর্বনাশা, দায়িত্বজ্ঞানহীন নেতা-নেত্রীর সাম্প্রতিক জঘন্য, প্ররোচনামূলক, বিভেদমূলক ও ঘৃণাসর্বস্ব মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করছি। এমন মন্তব্য ও আচরণের ফলে শুধু হিংসাই ছড়ায় না, দেশের মন বিভক্ত হয়, দেশের শান্তি ও সংহতিও নষ্ট হয়। আমি জোরালোভাবে দাবী করছি, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য ও ঐক্য রক্ষার স্বার্থে এবং সর্বসাধারণের মানসিক শান্তির প্রয়োজনে বিজেপির অভিযুক্ত নেতা-নেত্রীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক। একই সঙ্গে, এই ঘৃণ্য প্ররোচনা সত্ত্বেও, আমি আমার সমস্ত জাতি, ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের সকল ভাই ও বোনদের কাছে সাধারণ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’ কার্যত সেই সুরই এদিন দেখা গেল নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে। সেখানেও মুখ্যমন্ত্রী হাতজোড় করে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় বিভেদ তৈরির চেষ্টা চলছে। দিল্লিতে একটা ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য এখানে কেন অবরোধ? দিল্লি গিয়ে রাস্তা অবরোধ করুন। বাংলাকে তছনছ করা হচ্ছে জাতীয় সড়কে অবরোধ করে। এখানে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তাহলে কে দায় নেবেন? ইমাম অ্যাসোসিয়েশনের নাম করে ভুয়ো পরিচয় ছড়িয়ে এসব অশান্তি তৈরি করা হচ্ছে। দয়া করে রাস্তা অবরোধ করবেন না। আন্দোলন করতে হলে দিল্লি গিয়ে করুন। রাস্তা অবরোধ তুলে নিন, মানুষকে ঘরে ফিরতে দিন। রাস্তা অবরোধ করবেন না। এত মানুষের সমস্যা তৈরি করবেন না। অবরোধ করে জনজীবনের সমস্যা তৈরি করা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়, রাজ্য সরকারের নীতিও অবরোধের বিরুদ্ধে। আমাকে খুন করার ইচ্ছা হয়েছে? খুন করে যান। আমি হাসতে হাসতে মরতে পারব। কিন্তু বাংলায় কোনও অশান্তি ছড়াবেন না। আমি কথা বলেছি ইমামের সঙ্গে। উনি বলছেন, অশান্তি পছন্দ করি না আমরা, রাস্তা অবরোধে সমর্থন নেই। খিলাফত কমিটি, ফুরফুরা শরিফ নেতৃত্বও জানিয়েছে, তারা এ ধরনের প্রতিবাদ সমর্থন করে না। এটা সম্পূর্ণ একটা পরিকল্পনা। দেশে অর্থনৈতিক খরা থেকে জনগণের মুখ ফেরাতে পরিকল্পনা করেই এসব মন্তব্য করা হচ্ছে। আমি চাই, ওদের দ্রুত গ্রেফতার করে তিহার জেলে রাখা হোক।’