কলকাতা

অভিমানের প্রাচীর ভেঙে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শোভন-বৈশাখী, ঘর ওয়াপসি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

আচমকাই নবান্নে শোভন-বৈশাখী । তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় দিয়েছেন। তাঁদের আচমকা নবান্ন যাত্রা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা । দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে নবান্নের ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষে বৈঠকে বসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। যদিও নবান্ন থেকে বেরনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর শোভন এবং বৈশাখী বলেন, “২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর আমি এখান থেকে চলে এসেছিলাম কিন্তু, এই নয় যে দিদির সঙ্গে আমাদের দেখা হয়নি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ওঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা-আবেগ রয়েছে, সেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছি। মমতাদির ইচ্ছে, চিন্তা-ভাবনা বাস্তবায়িত করাই আমার কর্তব্য।” একইসঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মমতাদির কাছে আসব, একটু চা খাব, তাঁর নির্দেশ পালন করব। এটাই তো স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গে কেউ অরাজনৈতিক নয়। সাধারণভাবেই একটা চিন্তা-ভাবনা থাকে। এটা বহিঃপ্রকাশের একটা সময় রয়েছে।” বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠক একইসঙ্গে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত। শোভন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাই স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে। আমি দেখলাম ভাই আর দিদির রাজনৈতিক নানা আলোচনা। মুগ্ধ হয়ে সেগুলি দেখলাম। আমি চাই দ্রুত শোভন ওঁর রাজনৈতিক জীবনে ফিরুক। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অভিমানের প্রাচীর ভেঙে গিয়েছে। আবার পুরনো শোভনকে ফিরে পেলাম।” ওয়াকিবহাল মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরতে চলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ? রাজনৈতিক মহলের ধারণা, শেষ মুহূর্তে কোনও নাটকীয় পট পরিবর্তন না-হলে বিজেপির সঙ্গে যাবতীয় সংশ্রব এবং সম্পর্ক চুকিয়ে শোভন ফিরছেন সেখানেই, যেখানে তিনি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেন । ২০১৯-এর অগস্টে বিজেপিতে যোগদান করেন শোভন চট্টোপাধ্যায় । তার পর দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তা । ঠিক এক বছর বাদে ২০২০ সালের অগস্ট মাসে ফের শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক তৎপরতা । রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ফোনে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন । তখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে প্রায় সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে ‘মিশন কানন’-এ নামিয়ে দেওয়া হয় । তবে সে সময় সেই দৌত্য সফল না হলেও, এ দিন নিজে হাতেই সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । বিধানসভা ভোট মিটতেই শোভন ও তৃণমূলের দূরত্ব কমতে শুরু করে । তখন থেকেই তাঁর ঘর ওয়াপসি নিয়ে জল্পনা শুরু হয় । তবে এ ব্যপারে স্পষ্ট ভাবে মুখ খোলেননি তিনি । উল্টো দিকে শোভনের বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল । এখন বিধায়কও হয়েছেন তিনি । স্বামীর বিরুদ্ধে পরকীয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে তাঁর তৃণমূলে ফেরায় আপত্তি জানিয়েছিলেন রত্না । তৃণমূল সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় । তাঁর তৃণমূলে ফেরার রাস্তা তৈরি করতে ইতিমধ্যে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও বলেছেন দলের নেতারা । মনে করা হচ্ছে, সব দিক সামলেই এ বার শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ফেরা নিশ্চিত করতে চাইছে দল ।