কলকাতা

নিরাপত্তার স্বার্থে নবান্ন ও মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল একজন। প্রায় ৭ ঘণ্টা ঘাপটি মেরেছিল সেখানে।  পুলিশি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একজন রাতের অন্ধকারে সকলের নজর এড়িয়ে ঢুকে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন ৷ সেই ঘটনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই কারণে সোমবার এই নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ে বৈঠক হয়েছে ৷ নবান্নে এদিন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্র সচিব বিপি গোপালিকা সহ রাজ্য পুলিশের কর্তারা। বৈঠকে সুপারিশ করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় নবান্নে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা আর মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না।  ডিউটি শুরু হওয়ার আগে তাঁদের মোবাইল জমা রাখতে হবে। তাঁর বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন যে রক্ষীরা, তাঁরাও মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না।রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবন নবান্নে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হয়েছে সেই নিয়ম। তাতে বলা হয়েছে। নবান্নে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন ‘না’। কনস্টেবল ও সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীদের মোবাইল ফোন জমা দিয়ে নবান্নে ডিউটি করতে হবে। ডিউটি শুরুর আগেই তাঁদের মোবাইল ফোন জমা দিয়ে দিতে হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। ফোন সিকিউরিটিতে জমা দিয়ে নবান্নে ডিউটিতে ঢুকতে হবে। কোন বিশেষ প্রয়োজন থাকলে উর্ধ্বতন অফিসারের অনুমতি নিয়ে তারা ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। নির্দেশিকায় এমনই জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের নিরাপত্তয়যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে সেকারণেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নবান্নের সিসিটিভি সেগুলি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সব ক্যামেরা ঠিক মত কাজ করছে কিনা সেটা নজরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সই সঙ্গে ভিজিটরদের উপরেও নজরদারি চালানো হচ্ছে। যে ভিজিটরসরা আসছেন, তাঁদের নাম, ঠিকানা, পরিচয়পত্র সঠিক ভাবে দেখা হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এই নিরাপত্তা অভিযানে। পাশাপাশি দেখা হচ্ছে, নবান্নের লগ-বুক ঠিক করে রাখা হচ্ছে কি না। মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে শনিবার রাতে আগন্তুক ঢুকে পড়ার পরেই প্রশ্নের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা। ওই ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি এবং নবান্নের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখা হয়। তারপর ডাকা হয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। সেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাশাপাশি নবান্নেও নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো নিয়ে। নবান্নে এবং মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে ঢোকা এবং বেরনোর সময় নাম নথিভুক্ত করার ব্যবস্থা ছিল। সেখানে তথ্য নথিভুক্তকরণের পদ্ধতিতে বদল আনার সুপারিশ করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন ইনস্পেক্টর, একজন সার্জেন্ট, দু’জন কনস্টেবল–সহ কলকাতা পুলিশের ১৫ জনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকেন। তাই এই সুপারিশ।   নিরাপত্তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির পাঁচিলও উঁচু করা হচ্ছে। জানা গেছে, আগে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে ৭০ জন পুলিশকর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতেন। তবে আগন্তুক ঢুকে পড়ার পর প্রতি শিফটে ১৮ জন করে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সত্তরের পরিবর্তে প্রতি শিফটে ৮৮ জন পুলিশকর্মী মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। তিনটি বাড়তি পুলিশ পিকেট মোতায়েন করা হয়েছে। বাঙ্কার রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে সিসিটিভি রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছাকাছি প্রত্যেকটি অলিগলিতে সিসিটিভির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ির পিছনে ওয়াচ টাওয়ার তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। কালীঘাট ব্রিজ দিয়ে গোপালনগর যাওয়ার সব গাড়ি পরীক্ষা করা হবে। তবে এইসব সুপারিশ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাবে। মমতা সম্মতি দিলেই ওইসব সুপারিশ কার্যকর করা হবে।