জেলা

উত্তরবঙ্গ বলে তৃণমূলের অভিধানে কোনও শব্দ নেই, বঙ্গ একটাই রাজ্যকে ভাগ করার চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবে না: অভিষেক

‘বিজেপির কোনও নেতা কর্মী যদি বুকের পাটা থাকে এবং বাপের ব্যাটা হয় তাহলে বাংলা ভাগ করে দেখাও’

উত্তরবঙ্গ শব্দটা নিয়ে আমার শুনতে ভালো লাগে না। এদিন ধূপগুড়িতে দলীয় সভা থেকে এমনটাই বললেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সভা থেকে এদিন একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে নিশানা করেন ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ শব্দটি নিয়েও তিনি আপত্তি তোলেন দলীয় দলীয় সভাতে।  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমার উত্তরবঙ্গ কথাটা শুনতে ভালো লাগে না। মিডিয়ায় কিছু বন্ধুরা হেডলাইন করল উত্তরবঙ্গ সফরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে, হলদিয়াতে ছিলাম, তখন তো দক্ষিণবঙ্গ লেখা হয় না। আগামী ৬ মাসে এমন তৃণমূল তৈরি করব, পরেরবার আমি এলে খবর হবে উত্তয়বঙ্গ নয়, ধূপগুড়ি সফরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ বলে কিছু নেই। একটাই বঙ্গ, সেটা পশ্চিমবঙ্গ। যারা মানুষদের মধ্যে বিভাজন করতে চায়, রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচনের পরে ১৪ মাস হয়ে গিয়েছে। এই ১৪ মাস যারা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিল, তাদের টিকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একমাত্রা মাঠে ময়দানে রয়েছে তৃণমূল ।” তিনি আরও বলেন,”উত্তরবঙ্গ বলে তৃণমূলের অভিধানে কোনও শব্দ নেই। আমাদের অভিধানে দার্জিলিং, কালিম্পং, মালদা, জলপাইগুড়ি রয়েছে। আলাদা করে যদি কেউ ভাবে বাংলা বাংলাকে ভাগ করব শরীরের শেষ রক্তবিন্দু লড়ব কিন্তু বাংলাকে ভাগ হতে দেব না। এই মঞ্চ থেকে কথা দিয়ে এলাম। বিজেপির কোনও নেতা কর্মী যদি বুকের পাটা থাকে এবং বাপের ব্যাটা হয় তাহলে বাংলা ভাগ করে দেখাও। আমি যা বলি আমি তা করি। যেটা আমি পারব না, সেটা আমি বলে দিই। রাজ্যকে ভাগ করার চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবে না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করে বঙ্গভঙ্গের চক্রান্ত রোধ করা হবে। আলাদা করে উত্তরবঙ্গ যাঁরা দাবি করছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে, ধূপগুড়ির সভা থেকে এমনটাই বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন তিনি বলেন, মমতা

বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাকে ভাগ করতে দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, সরকার মানে দল নির্বিশেষে সকলের। এদিন তিনি বলেন, দলমত নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করবে রাজ্য সরকার। অভিষেকের কড়া বার্তা, ২১ জুলাই সমাবেশের আগে প্রত্যেকে নিজেদের রিপোর্ট কার্ড আনবেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২১ জুলাই উপলক্ষ্যে যাঁরা সমাবেশে আসবেন, তাঁরা প্রত্যেকে সঙ্গে করে নিজেদের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসবেন। দেখা হবে কে কত বুথে গিয়েছেন। এদিন তিনি বলেন, হয় ঠিকাদারি নয় তৃণমূল। একসঙ্গে দুটো কাজ করা যাবে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, কোনও দাদা দিদি ধরে লাভ হবে না। রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের একটাই নিয়ম। এদিন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, আগে গ্যাসের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ১১০০ টাকা। সরষের তেলের দাম আগে ছিল ১০০ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। বলেন, রাজ্যকে কেন্দ্র তার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। আটকে রেখেছে ১০০ দিনের এক হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজ্য পাচ্ছে না বলেও দাবি করেন অভিষেক। বলেন, বিজেপি নেতারা রাজ্যের সমস্ত প্রাপ্য টাকা আটকে দিচ্ছে। ভোটে হারার শোধ এভাবেই তুলছে বিজেপি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কয়েকজন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়াল তুলে দাঁড়িয়েছিল। সেই দেওয়াল ভেঙে দেওয়া হল। এদিন অভিষেকের কড়া বার্তা, নেত্রী একজনই, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য দাদা- দিদির ছত্রছায়ায় থেকে যা ইচ্ছে করা যাবে না। দাদা- দিদি ধরে মিলবে না নির্বাচনের টিকিট। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে স্থানীয় নেতৃত্বকে।সভা থেকে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে তৃণমূলের নির্বাচনী ফল ভাল হয়নি। অনেক মানুষ অভিমানে মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূল থেকে। বলেন, গণতন্ত্রে গণদেবতা মানুষই। মানুষের রায় শিরোধার্য। তারপরেই বলেন, মানুষের পাশে থাকবে তৃণমূল। যে কোনও দরকারেই পাশে পাওয়া যাবে। তৃণমূল বিজেপির মত নির্বাচনের পাখি নয়, যে শুধু ভোটের সময় আসবে। আরও বলেন, তিনি সভায় আসার আগে ভেবেছিলেন মানুষ তেড়ে আসবে, তবে সেই ভাবনা ভুল এখানের মানুষ আপন করে নিলেন। এরপরেই তাঁর প্রশ্ন, তিনি যদি পারেন, তাহলে এখানের বাকি তৃণমূল নেতারা পারবেন না কেন? প্রকল্পের নাম

পরিবর্তন ইস্যুতেও সরব হয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, প্রকল্পের নাম সেই জায়গা অনুযায়ী হবে। বাংলায় প্রকল্প বাংলার নামেই হবে। শুধু তাই নয়, বাংলাতেও বিভিন্ন জায়গা অনুপাতেও নাম হবে প্রকল্পের। বিস্ফোরক হয়ে বলেন, কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রীর নাম তুলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের নাম বসিয়ে দেননি। জায়গা অনুপাতে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এইজন্যেই প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়েছে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র। তারপরেই বলেন, কেন্দ্রের টাকা লাগবে না। বাংলার সরকার নিজে করে দেখাতে জানে। অভিষেকের দাবি, কেন্দ্রের টাকা চায় না বাংলার মানুষ। তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপি বলেছিল দু’কোটি চাকরি হবে। তা হয়নি। কিন্তু বিজেপির দাবি ছিল লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প আদৌ সম্ভব হবে না। তা সম্ভব করে দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। এদিন তিনি বলেন, বাংলা তার প্রাপ্য টাকা দাবি করে। কেন্দ্র আলাদা করে টাকা দেয় না। এই রাজ্য থেকেই টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র তবু প্রাপ্য টাকাটুকু দেয় না। বিস্ফোরক হয়ে বলেন, আবাস যোজনার ৮ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বলেন, দিদি টাকা দিচ্ছে মোদি নিচ্ছে। কটাক্ষ করে আরও বলেন, একজন রেশন দিচ্ছে, অন্যজন ভাষণ। মানুষের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে জনগণের টাকায় বিধায়ক কেনা বেচা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজেলের দাম ছাপিয়ে গিয়েছে কেরোসিন। মূল্য বৃদ্ধিতে লাগাম টানতে ব্যর্থ বিজেপি। শ্রীলঙ্কা- আফগানিস্তানের মত অবস্থা হতে চলেছে ভারতের। জনগণকে তা রোধ করার বার্তা দেন অভিষেক। সভা থেকে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অথচ এখন দেখা মেলে না। তারপরেই বলেন, দিল্লির টাকার জন্য মানুষ হাত পেতে নেই। রাজ্য নিজেই রাজ্যের ব্যবস্থা করে নেবে। এদিন তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে অনেকে হয়ত অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, অনেকে ভোট দিয়েছেন- পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তৃণমূল সকলের পাশে থাকবে। রাজ্য সরকার কোনও বিশেষ দলের নয়, সরকার সকলের, এমনই বার্তা ডায়মন্ড হারবারের সংসদের। দলের নেতা-নেত্রীদের প্রতি তাঁর বার্তা, মানুষের কাছে মাথা নত করে যাওয়ার। মানুষের জন্য কাজ করার। এও বলেন, গ্রহণযোগ্যতা থাকলে তবেই মিলবে নির্বাচনের টিকিট। এদিন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তাঁকে বারবার জনসংযোগ করতে দেখা গেল। আবার ধূপগুড়িতে যাওয়ার আগে তিনি গিয়েছিলেন ময়নাগুড়িতে। দোমহানি বাজারে গিয়ে বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে এদিন তিনি সরাসরি ফোন করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে। দেড় মাসের মধ্যে অর্ধসমাপ্ত কাজ শেষ করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।