দেশ বিবিধ

ভারতে এবার মাঙ্কিপক্স-এর হানা, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক

এবার মাঙ্কিপক্স-এর হানা। ভারতের প্রথম মাঙ্কি পক্স ধরা পড়ল কেরলায়। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এক পর্যটকের শরীরে ধরা পড়ল এই রোগের জীবাণু। তাঁর শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল। তাঁর নমুনা পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়। তা পজিটিভ হওয়ার রিপোর্ট আসে।  করোনার পরও স্বস্তি নেই বিশ্বে। নতুন করে আশঙ্কা তৈরি করেছে মাঙ্কি পক্স। ইতিমধ্যেই ৫৮টি দেশে ৩৪১৭টি নিশ্চিত মাঙ্কিপক্সের ঘটনা ঘটেছে।  এদিন সন্ধ্যায় দেশে প্রথম মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলতেই উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে চিঠি পাঠালেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ৷ চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছেন, যে সন্দেহভাজন সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত এবং বিচ্ছিন্ন করার জন্য সমস্ত প্রবেশ পথে কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা থাকা উচিত। মাঙ্কিপক্সের বিস্তার ক্রমাগত বাড়ছে। তাই ভারতেও এই নিয়ে প্রস্তুতি এবং প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিকে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার প্রয়োজন রয়েছে। জানা গিয়েছে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ওই ব্যক্তি তিনদিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে কেরলে পৌঁছেছেন। কেন্দ্রের তরফ থেকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়েছে যে, রাজ্যে প্রবেশের পয়েন্টগুলিতে স্ক্রিনিং দল, নজরদারি দল এবং ডাক্তারদের মোতায়েন করতে হবে। তাঁদের থেকে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট নিতে হবে। যাতে সন্দেহভাজন সম্ভাব্যের সংক্রমণ শনাক্ত করে আলাদা করা যায়। রাজ্যগুলিকে ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন দ্বারা চিহ্নিত এলাকাগুলিতে স্ক্রিনিং ও টেস্ট করতেও বলেছে কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত, ৭ মে ইংল্যান্ডে প্রথম ধরা পড়ার পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে এই ভাইরাস। রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশকে কড়া সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৫৮ সালে প্রথম মাঙ্কি পক্সের ভাইরাসের হদিস মিলেছিল। কঙ্গোতে ১৯৭০ সালে প্রথম বারের জন্য মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়। ব্রিটেনে ২০১৮ সালে প্রথম বার এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পান বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সে বার এমন হারে ছড়ায়নি সংক্রমণ। কিন্তু এবার তা মহামারীর আকার ধারণ করেছে। মাঙ্কি পক্স আসলে পশুবাহিত রোগ। যে ধরনের পশুর শরীর থেকে এ রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা তারা মূলত গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার বৃষ্টি বনাঞ্চলের বাসিন্দা হয়ে থাকে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল অতিমারিতে আক্রান্ত নয় এরকম দেশগুলিতে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি এই দেশগুলিতে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ভাইরাসের সংক্রমণও রোধ করা সম্ভব। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। হু-র তরফে চলা মাঙ্কি পক্স নিয়ে গবেষণার নেতৃত্বে থাকা মারিয়া ভ্যান কেরখোভ জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে এই রোগ শনাক্ত করে আক্রান্তদের নিভৃতবাসে পাঠানো যেতে পারে। এক জন অন্য জনের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে, বিশেষ করে ত্বকের সংস্পর্শে এলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তাই নিভৃতবাসই এই রোগের প্রকোপ কমাতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা যন্ত্রণা, পেশিতে ব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথার মতো কিছু প্রাথমিক উপসর্গ মাঙ্কি পক্সের ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও মাঙ্কি পক্সে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। ফোস্কার মতো অসংখ্য ক্ষতচিহ্নের দেখা মেলে শরীরে।