স্নায়ুযুদ্ধ চালাতে পারলেন না পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। প্রত্যাহার করলেন বনধ। আর তার জেরে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন পাহাড়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী থেকে পর্যটকেরা। আগামিকাল থেকেই রাজ্যে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। আর আগামিকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পাহাড়ে ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দিয়েছিলেন বিনয় তামাং। সেই বনধ সমর্থন জানিয়েছিল বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি। শুধু তাই নয়, পাহাড়ে আবারও অশান্তির ছক কষে তামাং ও এডওয়ার্ড সহ GTA’র ৭জন সদস্যও আমরণ অনশন শুরু করেন দার্জিলিংয়ের বুকে ভান্য ভবনের সামনে। সেই অনশন আন্দোলন এদিনও চলছে তবে বনধের জায়গা থেকে কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হলেন তাঁরা। এই বনধ প্রত্যাহারের পিছনে একদিকে যেমন কাজ করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) ধমক তেমনি কাজ করেছে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পিছনে পাহাড়ের আমজনতার ছিঁটেফোঁটা সমর্থন না থাকা। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন পাহাড়ের রাজনীতির অভিজ্ঞরা। পাহাড়ের মানুষেরা আর নতুন করে কোনও বনধ, কোনও অশান্তি চান না। তাঁরা চান শান্তি আর উন্নয়ন। এই সারসত্যটা সবাই বুঝলেও বুঝতে চাইছেন না বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তাঁরা চান আলাদা রাজ্য যেখানে তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে বসবেন। আর তাই থেকে থেকেই পাহাড়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার ছক কষেন তাঁরা। পিছন থেকে তাঁদের পরিচালনা করার পাশাপাশি মদর দেয় গেরুয়া বাহিনী। নিরন্তর খালি বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্র। যদিও এই খেলা পাহাড়ের জনতা বুঝে গিয়েছেন। তাই কে বিমল গুরুং, কে বিনয় তামাং, কে অজয় এডওয়ার্ড তা তাঁরা আর ফিরেও দেখেন না। গুরুংও অনশনে বসেছিলেন কয়েক মাস আগে। কিন্তু তাতে ছিঁটেফোঁটা সমর্থন দেখাননি পাহাড়ের জনতা। শেষে লেজ গুটিয়ে অনশন তুলে নেন গুরুং। তামাং আর এডওয়ার্ডও GTA’র ৭জন সদস্যকে নিয়ে অনশন শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনকেও ছিঁটেফোঁটা পাত্তা দেয়নি পাহাড়ের জনতা। কেউ এসে ভিড় করেননি তাঁদের চারপাশে। তাই নিজেদের ওজন মাপতে বিনয় তামাং ১২ ঘন্টার বনধের ডাক দেন। আর সেটাও আগামিকাল, অর্থাৎ মাধ্যমিক শুরুর দিন। তামাং অবশ্য বলেছিলেন মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীদের বনধে ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও উদ্বেগ কমেনি পাহাড়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের মধ্যে। এই বনধ যাতে প্রত্যাহার হয় তার জন্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফেও তামাংকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজেনি। শেষে মঙ্গল বিকালে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়ে দেন এই বনধকে কোনঅভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এই বনধকে কেউ সমর্থনও জানাবে না। বরঞ্চ কড়া হাতেই তা মোকাবিলা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তাই স্বস্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল পাহাড়ের বুকে। সেই বার্তার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই এদিন সকাল থেকেই দেখা গেল পাহাড়ে ছেয়ে গিয়েছে পুলিশে পুলিশে। শুধু দার্জিলিং শহরেই ২ আহাজার পুলিশ নামিয়ে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর দার্জিলিং ও কার্শিয়াং এই দুই মহকুমা এবং কালিম্পং জেলায় মোট ৩০ হাজার পুলিশ নামিয়ে দেওয়া হয়।