অন্নপূর্ণা পুজো চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমীতে পালিত হয়। এবছর ২৮ মার্চ বাসন্তী পুজো । চৈত্রের শুক্লপক্ষের বাসন্তীপুজোকেই আসল দুর্গাপুজো হিসাবে ধরা হয়। তারপরদিনই অর্থাৎ ২৯ মার্চ অন্নপূর্ণার পুজো। দেবী দুর্গার অপর রূপ অন্নপূর্ণা দশভূজা নন, বরং দ্বিভূজা। মা অন্নপূর্ণা অন্নদা নামেও পরিচিত। মা অন্নপূর্ণা কে বলা হয় অন্নদাত্রী। তিনি শক্তির অপর রূপ। মা অন্নপূর্ণার এক হাতে থাকে অন্ন পাত্র অন্য হাতে থাকে হাতা। যাঁর মস্তকে নবচন্দ্র, একপাশে রয়েছেন ভূমি অন্যপাশে শ্রী। যিনি ভিক্ষারত শিবকে অন্ন দান করেন। হিন্দু রীতি বলে অন্নপূর্ণাকে পুজো করলে সংসারে অন্নাভাব হয় না। বাসন্তী পুজোর অষ্টমী তিথিতে করা হয় অন্নপূর্ণার পুজো । ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর অন্নদামঙ্গল কাব্যে দেবী অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য বর্ণণা করেছেন। কথিত আছে শিব পাবর্তীর বিয়ের পর সুখে কৈটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু সুখের মাঝেই বেঘাত ঘটায় দাম্পত্য কলহ। প্রবল অশান্তির পর পার্বতী কৈলাশ থেকে মর্ত্যে চলে আসেন। সেই সময় দেখা যায় মহামারি, অন্ন কষ্ট। এরপর কাশীতে মহাদের অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা চান। সেই ভিক্ষা গ্রহণ করে মহামারী, অন্নাভাব থেকে ভক্তদের রক্ষা করেছিলেন অন্নপূর্ণা। চৈত্রের শুক্লপক্ষে বুধবার দেবী অন্নপূর্ণার আরাধনা আজ বাঙালির ঘরে ঘরে। দ্বিভূজা দেবীর একহাতে কলস, অন্য হাতে তিনি অন্নদান করছেন ভগবান শিবকে। মনে করা হয়, গৃহে অন্নপূর্ণার পুজো করলে কখনওই অন্নের অভাব হয় না। অন্নপূর্ণা পুজোয় দরিদ্র নারায়ণ সেবা করলে ঘরে সমৃদ্ধি আসে। বুধবার সারাদিনই অষ্টমী রয়েছে। ফলে সেই মতো পুজো অর্পণ করতে পারেন। অন্নপূর্ণা পুজোর দিন কী কী করলে পুণ্য লাভ হবে জেনে নিন। পৃথিবীতে খাদ্য সরবরাহ করা হয় শুধুমাত্র মা অন্নপূর্ণার কাছ থেকে। তাই রান্নাঘর অন্নপূর্ণা মাতার স্থান ধরা হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে মা অন্নপূর্ণার পূজা এবং খাবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তিকে কখনই ক্ষুধার্ত থাকতে হয় না। তাই এই দিনে খাবারের অপমান করা উচিত নয়। কথিত আছে, যে বাড়িতে মা অন্নপূর্ণার আশীর্বাদ থাকে, সেখানে কোনো ধরনের অভাব হয় না। মা অন্নপূর্ণার কৃপায় খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার পূর্ণ থাকে, অর্থের অভাব দূর হয়। অন্নপূর্ণার ভাঁডডার কখনও খালি হয় না। অন্নপূর্ণা পুজোয় খাবার নষ্ট করবেন না। অন্নপূর্ণা অন্নের দেবী, তিনি অপচয় পছন্দ করেন না। মা দুর্গার সঙ্গে সঙ্গে শিবেরও আরাধনা করতে হবে এদিন। একটি জবা ফুলে লাল চন্দন লাগিয়ে তার মধ্যে একটি এলাচ দিয়ে দেবীরে পুজো করুন। বাড়িতে অন্নপূর্ণার আরাধনা হলে অন্নকূট করুন। পুজোর ভোগে মায়ের প্রিয় মুগের ডাল, ভাত, শাক ভাজা, মোচার ঘন্ট আর ছানার ডালনা রাখুন। এদিন দান করুন। নিজের ঘর থেকে চাল নিয়ে দান করুন গরিব মানুষদের। দরিদ্রকে পিতলের পাত্রে আতপ চাল দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই দিন আমিষ ভোজন করবেন না। মদ্যপান, ধূমপান থেকে দূরে থাকবেন।এমন কোন ব্যবহার করবেন না যাতে অপর মানুষ খুশি হন। মিথ্যে কথা বলবেন না। মিথ্যাচারে অসন্তুষ্ট হন দেবী।
কীভাবে কলশ স্থাপন করবেন
কলশ স্থাপনের জন্য প্রথমে সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নান ইত্যাদির পর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করুন। মন্দির পরিষ্কার করার পরে, একটি সাদা বা লাল কাপড় বিছিয়ে দিন। এই কাপড়ে কিছু ধান দিন। একটি মাটির পাত্রে বার্লি বপন করুন। এই পাত্রে জল ভর্তি একটি কলস স্থাপন করুন। কলশের উপর একটি স্বস্তিক তৈরি করুন এবং তার উপর সুতো বাঁধুন। আস্ত সুপারি, মুদ্রা ও অক্ষত রেখে কলশে অশোক পাতা রাখুন। একটি নারকেল নিন এবং তার উপর ওড়না মুড়িয়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিন। এই নারকেলটি কলশের শীর্ষে রেখে দেবী দুর্গাকে আবাহন করুন। এরপর প্রদীপ জ্বালিয়ে কলশের পূজা করুন। নবরাত্রির সময় দেবীর পুজোর জন্য সোনা, রূপা, তামা, পিতল বা মাটির কলস স্থাপন করা হয়।