দেশ

একতরফা উপাচার্য নিয়োগ চলবে না, রাজ্যপাল উপাচার্যদের নির্বাচন কর্তা নন, কড়া বার্তা সুপ্রিমকোর্টের

তৈরি হবে সার্চ কমিটি

একতরফা রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ নয়। এবার সার্চ কমিটি গঠন করবে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ঠিক হবে রাজ্যের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কে হবেন স্থায়ী (রেগুলার) উপাচার্য। যতদিন না তাঁদের নিয়োগ হচ্ছে, ততদিন অস্থায়ীরা কাজ চালিয়ে যাবেন। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দায়ের করা এক মামলায় এমনই নির্দেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত। ফলে এখন থেকে রাজ্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আর আলাদা আলাদা সার্চ কমিটি গঠিত হবে না। থাকবে একটিই কমিটি। তার জন্য আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তিন থেকে পাঁচ জন করে বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ইউজিসি এবং রাজ্যপাল তথা আচার্যকে। ২৭ তারিখ পরবর্তী শুনানি। আদালতের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘আমাদের দু’টি দাবি ছিল। প্রথমত, একতরফা উপাচার্য নিয়োগ না করে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন রাজ্যপাল। দ্বিতীয়ত, স্থায়ী সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের অকর্মণ্যতা এবং অপদার্থতা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও সেকথা বলেছে।’উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই নবান্ন-রাজভবন সংঘাত চরমে। রাজ্য সরকারের দাবি, তাদের সঙ্গে উপযুক্ত আলোচনা ছাড়া একগুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। যে পদ্ধতিতে নিয়োগ হয়েছে, তা অবৈধ— এমনই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। যদিও রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে উচ্চ আদালত। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। এদিন সেই মামলার শুনানিতেই রাজ্যপাল তথা আচার্যের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ। শুনানির গোড়াতেই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, ‘নির্বাচনকারীর প্রেস্টিজ বা ইমেজ বাড়ানোর জন্য‌ উপাচার্য নিয়োগ নয়। প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বাড়ানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত। উপাচার্য হিসেবে বাছতে হবে যোগ্য ব্যক্তিকে। খেয়াল রাখতে হবে ছাত্রছাত্রীদের কথা। মাথায় রাখতে হবে শিক্ষার মান। তাই অস্থায়ী নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী (রেগুলার) উপাচার্যই নিয়োগ করতে হবে।’  রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেন, আলোচনায় বসার জন্য আচার্যকে তিনবার, ইউজিসিকে পাঁচবার চিঠি দিয়েছে রাজ্য। জবাব আসেনি। শুনে ক্ষুব্ধ বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, ‘আর কারও জবাবের দরকার নেই। আমরাই হস্তক্ষেপ করছি। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ দেখা আমাদের অগ্রাধিকার। তাই আমরাই সার্চ কমিটি তৈরি করে দিচ্ছি।’ রাজ্য সরকারের সার্চ কমিটি নিয়োগের বিলে মুখ্যমন্ত্রী সহ পাঁচজন সদস্যের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তিন থেকে পাঁচজনের নাম জমা দিতে বলেছে। এখন সরকার, ইউজিসি এবং আচার্যের একজন করে প্রতিনিধিকে নিয়ে কমিটি গড়া হলে বাদ পড়তে পারেন মুখ্যমন্ত্রী এবং উচ্চ শিক্ষা সংসদের মনোনীত সদস্য। সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেবে সরকার? রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে করা হয়েছিল এই প্রশ্ন। উত্তরে ব্রাত্যবাবু বলেন, ‘এব্যাপারে ইতিমধ্যেই আমরা আইনি পরামর্শ নিয়েছি। কি পদক্ষেপ করব, দু’-তিন দিনের মধ্যেই জানা যাবে।’