কলকাতাঃ গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে তাঁকে রাজ্যে আসার আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তারপরেই ছন্দপতন বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করে এক চিঠি দিয়েছেন।সেই চিঠিতে তিনি কার্যত দেউচা-পাঁচামি কয়লাখনির উদ্বোধনে না আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন। স্বপনবাবুর ওই চিঠির কথা জানার পর রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিল্প স্থাপনের যে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এই চিঠির পরে তা আরও খানিকটা জটিল হয়ে পড়ল। বিজেপি সাংসদের এই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে খানিকটা জল ঢেলে দিল তা বলাই যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। ওই চিঠিতে বিজেপি সাংসদ প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘দেউচা পাঁচামি প্রকল্প একেবারে শুরুর স্তরে রয়েছে। খনি থেকে কয়লা খননের কাজ শুরুর ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও ছাড়পত্র মেলেনি। ওই এলাকায় প্রচুর আদিবাসী মানুষের বাস করেন। এই মুহূর্তে খনির কাজ শুরু হলে তাঁদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। ওই খনিতে কয়লা খননের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসীদের আপত্তি রয়েছে। রাজ্য সরকার নিজেও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। রাজ্য জানিয়েছে, ওই এলাকার মানুষের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প তৈরির ব্যাপারে কোনও কাজ এখনও শুরুই হয়নি। সর্বোপরি বীরভূমের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি আদৌ ভাল নয়। শাসক দলের মদতে স্থানীয় কিছু নেতা ও পুলিশ ওই এলাকায় গুণ্ডাগিরি চালাচ্ছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে জমি মাফিয়ারা। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ওই খনি উদ্বোধন করতে বাংলার মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।’স্বপনবাবুর দাবি, প্রধানমন্ত্রী সেখানে গেলে সকলেই মনে করবেন, ওই প্রকল্প সব ধরনের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখকে সামনে রেখে গায়ের জোরে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে। সেক্ষেত্রে বিজেপি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে আদিবাসীদের কাছে। তাই সবদিক খতিয়ে দেখেই যেন তিনি প্রকল্পের উদ্বোধনে আসেন।রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপিতে স্বপন দাশগুপ্ত মোদি-অমিত শাহ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাই রাজ্যের উপর চাপ বাড়াতেই এই চিঠি মূলত বিজেপির কৌশল। তবে নিজের চিঠিতে বিজেপি সাংসদ এটাও জানিয়েছেন যে, জাতীয় স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু স্বচ্ছতার সঙ্গে এই কাজ করতে হবে। এই চিঠির কথা জানার পর রাজ্য সরকার বা শাসক দলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছে, বাংলার উন্নয়নে বিজেপি বাধা দিচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার প্রশাসনিক কাজে ব্যর্থ এটা প্রমাণ করাই লক্ষ্য বিজেপি নেতৃত্বের।