দেশ

ভোটের আগে অবস্থান বদল, ব্রিজভূষণ ঘনিষ্ঠের নয়া কমিটি বরখাস্ত, মুখরক্ষায় মরিয়া মোদি সরকার

 একের পর এক কুস্তিগিরের প্রতিবাদ, পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ায় কি টনক নড়ল মোদি সরকারের? কারণ, রবিবার ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নবনির্বাচিত কমিটিকেই সাসপেন্ড করে দিল কেন্দ্র। ক্রীড়ামন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন কমিটি প্রাক্তন পদাধিকারীদেরই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই প্রবণতা জাতীয় স্পোর্টস কোডের বিরোধী। নতুন কমিটির সভাপতি সঞ্জয় সিং হঠাত্ করে ঘোষণা করেছিলেন, কুস্তির অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় প্রতিযোগিতা উত্তরপ্রদেশের গোন্ডার নন্দিনীনগরে অনুষ্ঠিত হবে। তারপরই বরখাস্ত করা হয় কমিটিকে। এভাবে প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্তকেও ‘হঠকারী’ বলেছে ক্রীড়ামন্ত্রক। সংস্থার কাজ দেখাশোনার জন্য ভারতীয় ওলিম্পিকস সংস্থাকে একটি অ্যাড-হক কমিটি গঠনের কথাও বলেছে কেন্দ্র। আর তড়িঘড়ি এই সিদ্ধান্তেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল মোদি সরকার? এতদিন বহু প্রতিবাদ সত্ত্বেও তো ফেডারেশনের যাবতীয় বিতর্কের ব্যাপারে গা করেনি মন্ত্রক। কিন্তু মেডেলজয়ী একের পর এক অ্যাথলিট বুটজুতো তুলে রাখায় এবং পদক প্রত্যাখ্যান করায় টনক নড়েছে সরকারের। কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের মুখ পুড়ছে, যা ভোটের আগে মোটেই সুখকর বিজ্ঞাপন নয়। কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেছিলেন একাধিক প্রথম সারির মহিলা কুস্তিগীর। কিন্তু ২১ ডিসেম্বর কুস্তি সংস্থার নির্বাচনের পর দেখা যায়, সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ব্রিজভূষণেরই ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং। কিন্তু এদিন কমিটি বরখাস্তের কথা জানাজানি হতে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়েছে ক্রীড়ামহলে। নতুন কমিটি নির্বাচন নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে খেলা ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন ওলিম্পিকসে ব্রোঞ্জজয়ী সাক্ষী মালিক। এদিন তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘আমাদের লড়াই সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বরং মহিলা কুস্তিগীরদের জন্য। আমি অবসর ঘোষণা করেছি, কিন্তু প্রার্থনা করি, অন্যরা যেন ন্যায়বিচার পায়।’ এদিনই গুজব ছড়ায়, পদক ত্যাগ করা বজরং পুনিয়াও পদ্মশ্রী ফেরত চেয়েছেন। যদিও বজরংয়ের বক্তব্য, ‘আমার দিদি ও বোনেদের সম্মানের থেকে কোনও সম্মানই বড় নয়। আমি পদ্মশ্রী ফেরত নেব না। বিচার পেলে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করব।’ ক্রীড়ামন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ওলিম্পিকসে অংশগ্রহণকারী কুস্তিগীর গীতা ফোগাতও। এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘যদিও অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তবু আলো দেখা যাচ্ছে যে, কুস্তিগিররা হয়তো বিচার পাবেন।’ ভারতের প্রথম ওলিম্পিকস পদকজয়ী বক্সার ও কংগ্রেস নেতা বিজেন্দর সিং কেন্দ্রকে বিঁধে লিখেছেন, ‘ওরা কুস্তি ছাড়তে বাধ্য করেছে, পদ্মশ্রী ফেরাতে বাধ্য করেছে। আর এখন কুস্তি সংস্থার কমিটিকে সাসপেন্ড করছে! এটা আরও অনেক আগেই করা উচিত ছিল।’ যদিও কুস্তি সংস্থার কমিটিকে সাসপেন্ড করাকে প্রহসন বলে দাবি করেছে এনসিপি। শারদ পাওয়ারের দলের তরফে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পরও মুক্তি পাবে না বিজেপি। কারণ, ওরা আসল সময়ে মহিলা কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়ায়নি। এবার অবস্থান অনেকটা বদলে কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকার। এমন পদক্ষেপের নেপথ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ আছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একটা বড় অংশ।