রবিবার জলপাইগুড়িতে মাত্র ২৫ মিনিটের বক্তৃতায় জলপাইগুড়ির ঝড়, সন্দেশখালি, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমণ করলেও ভাষণে ঝাঁঝ দেখা যায়নি প্রধানমন্ত্রী মোদির। যা নিয়ে অসন্তুষ্ট দলের কর্মীরাই! ময়নাগুড়ি থেকে আসা মহিলা সমর্থকরা বলছিলেন, কী যে হল বুঝলামই না। কিছু তো বললেনই না প্রধানমন্ত্রী। এইটুকুর জন্য কয়েকশো কোটি টাকা খরচ! এদিনের সভার নাম দেওয়া হয়েছিল বিজয় সংকল্প সভা। বিজেপির তরফে বলা হয়েছিল, দেড় লক্ষ মানুষ আসবেন। শেষে দেখা গেল দেড় তো দূরের কথা মেরে কেটে প্রায় ৪০ হাজার লোক এসেছে সভায়। ম্যানেজ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলে গেলেন, “মাঠ ছোট হওয়ার কারণে সবাইকে জায়গা দিতে পারিনি আমরা।” শুক্রবার জলপাইগুড়িতে সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানিয়েছিলেন, মোদি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মানুষের পাশে “দাঁড়াতে” জানেন। এদিন আরও একবার সেটাই প্রমাণিত হল। জলপাইগুড়ির যে ঝড় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী পোস্ট করেছিলেন, সেই অকুস্থল থেকেই ১২ জনকে এদিন আনা হয়েছিল সভাস্থলে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা তো করলেনই না, এমনকি মঞ্চেও উঠতে দেওয়া হল না তাঁদের। বক্তৃতার শুরুতে এদিন মোদি বলেন, “জলপাইগুড়িতে ভয়ানক ঝড়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের পাশে আছে।” সভার শেষে সুকান্ত মজুমদার জানিয়ে গেলেন, “মোদিজি সমবেদনা জানিয়েছেন। উনি ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন। সে কারণে ঝড়ে আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করানো সম্ভব হয়নি।” এদিন বক্তৃতার শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই নির্বাচন শুধু সাংসদ নির্বাচন নয়, এই নির্বাচন মজবুত সরকার গঠনের নির্বাচন। গত ১০ বছরে যা উন্নতি আপনারা দেখেছেন তা শুধু ট্রেলার ছিল। আর্থিক শক্তির দিক থেকে ভারতকে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে পৌঁছনো আমার লক্ষ্য। ২০৪৭ সালে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে ২৪×৭ কাজ করে যাচ্ছি আমি। উত্তরবঙ্গে পর্যটন শিল্পের যাতে উন্নতি হয় সে কারণে এখানে জি-২০ বৈঠক করেছিলাম।” উন্নয়ন, পর্যটন শিল্প, গরীবদের প্রসঙ্গ আনলেও সমাধান কিছু শোনা গেল না প্রধানমন্ত্রীর গলায়। মোদির দাবি, চা বাগানগুলিতে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। আবাস যোজনার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই টাকা নাকি চলে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দলের পকেটে। এরপরেই নিজের গ্যারান্টির তালিকা খুলে বসেন তিনি। বলেন, “ইডি ৩০০০ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। মোদির গ্যারান্টি সেই টাকা গরীবদের ফেরত দেওয়া হবে। ৪ জুনের পর ভ্রষ্টাচারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” ইন্ডিয়া জোটের নীতি নিয়েও এদিন প্রশ্ন তুলে বলেন, “কংগ্রেস চায়নি কাশ্মীর ভারতের হোক। ৩৭০ ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মোদির গ্যারান্টি কাশ্মীর ভারতেরই থাকবে।” প্রথম দফার নির্বাচনের আগে মোদি এলেন বটে বাংলায়। ভাষণ দিলেন। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষের জন্য, উত্তরবঙ্গ তথা বাংলার মানুষের জন্য কী রইল, প্রশ্ন উঠছে সেখানেই।