শ্লীলতাহানি ইস্যুতে বিতর্কের মধ্যেই দিল্লি উড়ে গেলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যপালের সি ভি আনন্দ বোসের দিল্লি যাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। বুধবার ভোরে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিতে কলকাতা বিমানবন্দরে আসেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাঁর এই হঠাৎ দিল্লি যাত্রার কারণ কী? তা নিয়ে রাজ্যপাল যেমন কোনও মন্তব্য করেননি, ঠিক তেমনই রাজভবনের তরফেও কোনও বিবৃতি জারি করা হয়নি বা কিছু জানানো হয়নি। ফলে রাজ্যপালের হঠাৎ দিল্লি যাত্রা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। ওদিকে রাজভবনে শ্লীলতাহানি বিতর্কের জল গড়াল হাইকোর্টেও। হাইকোর্টের দ্বারস্থ রাজ্যপালের অফিস আধিকারিক। তদন্তের নামে ৪১ নোটিস পাঠিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে। রক্ষাকবচ চেয়ে হাইকোর্টে মামলা ওএসডি-র।প্রসঙ্গত, গতকাল রাজভবন কাণ্ডে আগাম জামিন পান রাজভবনের তিন কর্মী- ওএসডি এসএস রাজপুত, কুসুম ছেত্রী ও শান্ত লাল। ৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান তিনজন। রাজভবনে শ্লীলতাহানি কাণ্ডে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ ও ১৬৬ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিস। সবগুলোই জামিনযোগ্য ধারা। মামলা রুজু হওয়ার পরই রবিবার তাদের তিনজনকে তলব করা হয়। কিন্তু হাজিরা এড়ায়। ফের আজ তাদের তলব করা হয়েছিল। কিন্ত পুলিসের কাছে হাজিরা না দিয়ে সোজা আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আর্জি জানান তিনজন-ই। শেষে ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান এসএস রাজপুর, কুসুম ছেত্রী ও শান্ত লাল। আটকে রাখা, নালিশে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ওই ৩ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছিল পুলিস। উল্লেখ্য, এই কুসুম ছেত্রীকেই ওই তরুণীর ব্যাগ নিয়ে তাঁর পিছনে হাটতে দেখা গিয়েছিল সিসিটিভিতে। এর পাশাপাশি, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগের ঘটনায় অভিযোগকারিণীর বয়ানও রেকর্ড হয়েছে। ব্যাঙ্কশাল আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে গোপন জবানবন্দি দেন অভিযোগকারী তরুণী। প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। ওদিকে ‘শ্লীলতাহানি’ কাণ্ডের মধ্যেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিসের তরফে এক ধর্ষণ মামলার রিপোর্টও জমা পড়েছে নবান্নে। এক নৃত্যশিল্পী রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ, গত বছর ৫ ও ৬ জুন একটি অনুষ্ঠানে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যান রাজ্যপাল। দিল্লিতে তাঁকে একটি পাঁচতারা হোটেল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই হোটেলেই ওই নৃত্যশিল্পীকে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। ওই নৃত্যশিল্পীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালায় ডিসি পদপর্যদার এক অফিসারের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিসের একটি টিম। তারই রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। সবমিলিয়ে শ্লীলতাহানি থেকে ধর্ষণ, একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন রাজ্যপাল। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের হঠাৎ দিল্লি যাত্রা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রসঙ্গত, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল ওঠার পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রাজ্যপালের পদ থেকে সি ভি আনন্দ বোসের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছেন তিনি। এমনকী এও ঘোষণা করেছেন যে, দরকারে রাস্তায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি, কিন্তু রাজভবনে আর যাবেন না! ফলে সন্দেশখালিকাণ্ডে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে সি ভি আনন্দ বোস একের পর এক তোপ দাগার পর, পালটা শ্লীলতাহানি ইস্যুকে হাতিয়ার করে নয়া মাত্রা পেয়েছে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতও।