আরজি কর কাণ্ডের পর মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আরও কড়া হল রাজ্য সরকার। রাতে কর্মরত মহিলাদের জন্য ‘রাত্তিরের সাথী’-বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করা হবে। রাতে রাস্তায় পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ রাখা হবে। একা নয় প্রয়োজনে টিম হিসেবে কাজ করবেন মহিলারা। রাতে সমস্ত হাসপাতালে মহিলাদের সবরকম নিরাপত্তা দিতে হবে বলে জানান মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে ‘রাত্তিরের সাথী’-প্রকল্পে প্রশাসনের তরফে সমস্ত মহিলাদের নিরাপত্তায় ১০টি পয়েন্টের কথা উল্লেখ করা হয়।
রাজ্যের তরফে কী কী নির্দেশিকা দেওয়া হল –
- হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালগুলিতে নির্দিষ্ট, চিহ্নিত বিশ্রামঘর সঙ্গে শৌচালয় থাকবে।
- রাত্তিরের সাথী নামে পুলিশের সঙ্গে মহিলা সিকিউরিটি ফোর্স রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
- মহিলাদের জন্য ‘সেফ জোন’ তৈরি করতে হবে। সেই ‘সেফ জোন’-কে পুরোপুরি সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলতে হবে।
- সমস্ত মহিলাদের এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। যাতে থাকবে অ্যালার্ম ডিভাইস, যা স্থানীয় থানা এবং কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা থাকবে। এই অ্যাপটি পুলিশ শীঘ্রই তৈরি করে দেবে।
- বিপদে পড়লে হেল্পলাইন নম্বর ১০০/ ১১২-এ কল করতে হবে।
- সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সিকিউরিটি চেক ও শ্বাস পরীক্ষা করা হবে।
- সমস্ত কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিশাখা কমিটি গঠন করতে হবে, যদি করা না থাকে।
- সমস্ত সরকারি কর্ম প্রতিষ্ঠানে এই ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকেও যথাসম্ভব এই নিয়মগুলি মেনে চলার আর্জি করা হয়।
- একা নয়, রাতে মহিলাদের দলবদ্ধ অথবা জোড়ায় কাজ করতে হবে। কে কোথায় যাচ্ছেন তা সহকর্মীরা জানবেন।
- সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে, সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল, জেলা হাসপাতালে ‘সিকিউরিটি চেক’ হবে। ব্রেথ অ্যানালাইজার টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ কেউ মদ্যপান করেছেন কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
- মহিলাদের যৌন হেনস্থা রুখতে শাখা কমিটি তৈরি করতে হবে প্রতিটি সংস্থাকে (যদি এখনও না করা হয়)।
- মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সেই আর্জি জানানো হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় সেই কর্মসূচি চলবে।
- ‘জোড়া-জোড়ায়’ কাজ করতে হবে। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, রাতে মহিলাদের কাজের সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একটা টিম হিসেবে তাঁরা থাকেন। একা কোনও মহিলাকে নাইট ডিউটিতে দেওয়া যাবে না। আর একে অপর কোথায় যাচ্ছেন, সেটাও জানতে হবে।
- বেসরকারি সংস্থাগুলিও যাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয় উৎসাহ দেওয়া হবে।
আরও কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে –
১) সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল, মহিলাদের হস্টেল এবং সেরকম জায়গায় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ‘নাইট প্যাট্রোলিং’ করবে।
২) প্রতিটি হাসপাতাল এবং অন্যান্য অফিসের প্রতিটি তলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের বন্দোবস্ত করতে হবে।
৩) মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রত্যেক সদস্য, কর্মী, নিরাপত্তারক্ষীদের গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিতে রাখতে হবে।
৪) রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জেলা হাসপাতালের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজরদারির জন্য পুলিশকে ‘সিকিউরিটি অফিসার’ মোতায়েন করতে হবে।
৫) চিকিৎসক-সহ কর্মরত মহিলাদের যাতে একটানা ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬) মহিলাদের যতটা কম সম্ভব নাইট ডিউটি দেওয়া যায় বা নাইট ডিউটি না দেওয়া যায়, তা দেখতে হবে।
৭) সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে যে নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে, তাতে সমানুপাতে মহিলা এবং পুরুষ থাকতে হবে।