বেঙ্গালুরুতে ২৯ বছরের মহালক্ষ্মীর ৫৯ খণ্ড দেহ উদ্ধারের ঘটনায় ‘প্রধান সন্দেহভাজন’ তাঁরই সহকর্মী মুক্তিরঞ্জন রায়, বুধবার সকালেই এমনটা জানিয়েছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ। সেদিনই রাতের খবর, ওডিশার ভদ্রকে একটি গাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বছর তিরিশের অভিযুক্ত মুক্তিরঞ্জনের ঝুলন্ত দেহ! পুলিশের দাবি, সম্ভবত গ্রেপ্তারির ভয়ে আত্মহত্যা করেছে মুক্তি। সূত্রের খবর, বাড়িতে রেখে যাওয়া একটি সুইসাইড নোটে মহালক্ষ্মীকে খুনের কথা স্বীকার করেছে সে।বুধবার সকালে বেঙ্গালুরুর তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছিলেন, মুক্তিরঞ্জন নামে মহালক্ষ্মীর ওই সহকর্মী ওডিশার বাসিন্দা হলেও চাকরি সূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকত। মহালক্ষ্মীর দেহ উদ্ধারের পর থেকে মুক্তি বেপাত্তা। তার খোঁজে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওডিশায় দু’টি টিম পাঠিয়েছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ। এর মধ্যেই জানা যায়, ওডিশায় এক ভাইকে ফোন করে মহালক্ষ্মীকে খুনের কথা স্বীকার করেছিল মুক্তি। তিনিই মুক্তিকে বেঙ্গালুরু ছাড়ার পরামর্শ দেন। মুক্তি শেষবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাড়িতে ফোন করেছিল বলে জানিয়েছেন সেই ভাই।সেই সূত্র ধরেই চলছিল খোঁজ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, মুক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন মহালক্ষ্মী। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তি জানতে পারে, অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গেও মহালক্ষ্মীর সম্পর্ক রয়েছে। সেই রাগেই খুন। পুলিশের এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পরেই বুধবার রাতের দিকে জানা যায়, ওডিশার ভ্দ্রকে একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে মুক্তির দেহ। ময়নাতদন্তের পর মুক্তির দেহ বেঙ্গালুরু পুলিশের হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে। ভদ্রকের ধুসুরি এলাকায় মুক্তির বাড়ি। তার দেহ উদ্ধার হয়েছে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে কুলেইপড়া গ্রামে।পরিজনের দাবি, ২৪ সেপ্টেম্বর ভদ্রকের বাড়িতে এসেছিল মুক্তি। বুধবার খুব ভোরে বেরিয়ে যায় সে। পরে উদ্ধার হয় দেহ। ভদ্রকের এসপি বরুণ গুন্টুপল্লির বক্তব্য, ‘গত তিন দিনে ভদ্রক ও বালেশ্বরের সব জেলায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছিল বেঙ্গালুরু পুলিশ। আমরা সব রকম সহযোগিতা করেছি। আমাদের ধারণা, ভয়ের চোটেই আত্মহত্যা করেছে অভিযুক্ত। তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’মহালক্ষ্মীর দেহ উদ্ধারের পর তাঁর প্রাক্তন স্বামী হেমন্ত দাস, মা মীনা রানা এবং শপিং মলের সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সহকর্মীদের থেকেই জানতে পারে, ২০২৩ সাল থেকে মহালক্ষ্মী এবং মুক্তির বন্ধুত্ব। শপিং মলের কস্টিউম আউটলেটে টিম লিডার হিসেবে কাজ করতেন মহালক্ষ্মী। সেখানেই কাজ করত মুক্তিও। ১ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আর কাজে যাননি মহালক্ষ্মী, ২ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর ফোন সুইচড অফ। আর ২১ সেপ্টেম্বর মহালক্ষ্মীর দেহ উদ্ধারের পর থেকে বেঙ্গালুরুর ভাড়াবাড়ি থেকে ‘নিখোঁজ’ ছিল মুক্তি-ও, তারও ফোন সুইচড অফ।স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শপিং মলে চাকরি নিয়ে বেঙ্গালুরুর মালেশ্বরমে চলে এসেছিলেন মহালক্ষ্মী। সেখানের একটি ওয়ান-বেডরুম বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। সেখানের ফ্রিজ থেকেই উদ্ধার হয় তাঁর দেহাংশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, ৫৯ টুকরো করা হয়েছিল মহালক্ষ্মীর দেহ। তাঁকে বিষ দেওয়া হয়েছিল কি না জানতে অন্ত্রের নমুনা টক্সিকোলজি স্টাডির জন্য পাঠানো হয়েছে।