তমলুক: অসমে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের কম্বল সরবরাহের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নামে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল বিজেপির রাজ্যস্তরের এক নেতার বিরুদ্ধে। এনিয়ে সরগরম পূর্ব মেদিনীপুর। রাজ্য বিজেপির সম্পাদক নবারুণ নায়েক, তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী নায়েক ও তাঁদের চার শাগরেদের বিরুদ্ধে তমলুক থানায় এফআইআর হয়েছে। নথি জালিয়াতি করে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে টাকা হাতানো হয়েছে বলে অভিযোগ। কলকাতার হাইল্যান্ড পার্ক এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার বিশ্বজিৎ দত্ত ১০ অক্টোবর ওই বিজেপি নেতা এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। সেইমতো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তমলুক থানার পুলিস। এই ঘটনা জানাজানি হতেই রাজ্য বিজেপির অন্দরেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে। নবারুণ এক সময়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিজেপি সভাপতি ছিলেন। তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী তমলুক পুরসভায় কাউন্সিলার পদে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাস্ত হন। জানা গিয়েছে, অসমের বোড়োল্যান্ড স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে মোটা টাকার কম্বল সাপ্লাই করা হবে বলে জেনেছিলেন অভিযোগকারী ঠিকাদার। বিজেপি নেতা নবারুণ ওই কাজের বরাত দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন বলে বিশ্বজিৎবাবু তাঁরই এক ঠিকাদার বন্ধু ভাস্কর মণ্ডলের থেকে জেনেছিলেন। সেইমতো গত ২৪ আগস্ট বিশ্বজিৎবাবু ও তাঁর বন্ধু তমলুক শহরে এসে নবারুণবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেন। মোট টেন্ডার মূল্যের তিন শতাংশ কমিশন ওই বিজেপি নেতা দাবি করেন বলে বিশ্বজিৎবাবু পুলিসকে জানিয়েছেন। ওই ঠিকাদার সেই শর্তে রাজিও হন। গত ২৮ আগস্ট নবারুণের স্ত্রী তনুশ্রী, ওই ঠিকাদার এবং তাঁর বন্ধু গুয়াহাটি যান। নবারুণেরও যাওয়ার কথা ছিল। বিশেষ কাজে গোয়া যেতে হবে বলে তিনি যাননি। গুয়াহাটিতে একটি হোটেলে তনুশ্রী ওঠেন। সেই হোটেলে নবারুণের আরও তিন শাগরেদ এসেছিল। অসমের কোকড়াঝোড়ের একটি সংস্থা ওই কম্বল নেবে বলে জানানো হয়েছিল। গুয়াহাটি থেকে কোকড়াঝোড়ে নিয়ে গিয়ে ৩৯ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা মূল্যের কম্বল সরবরাহের ‘বরাত’ দেওয়া হয়। ফোনে নবারুণ ওই কাজের যোগাযোগ করিয়ে দেন বলে পুলিসকে জানিয়েছেন অভিযোগকারী। তাঁর আরও দাবি, ২৯ আগস্ট নবারুণ তাঁর এক এজেন্টকে ঠিকাদারের অফিসে পাঠিয়ে ১ কোটি ৩০লক্ষ টাকা কমিশন আদায় করেন। এরপর নবারুণ আরও একটি কাজের অর্ডার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ৫০কোটি ৬০লক্ষ টাকা মূল্যের কম্বল সাপ্লাইয়ের দ্বিতীয় একটি কাজের অর্ডার বাবদ আরও ৩০ লক্ষ টাকা নগদ দিতে হয়। এভাবে ওই ঠিকাদার সংস্থা নবারুণকে দু’দফায় মোট ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ। কমিশন দেওয়ার ১৫-২০দিনের মধ্যে ওই বিজেপি ওই নেতা এগ্রিমেন্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলে বিশ্বজিৎবাবুর দাবি। কিন্তু, কমিশন নেওয়ার পরথেকেই নবারুণ ও অন্য শাগরেদদের মোবাইল বন্ধ। গত ৭সেপ্টেম্বর ওই ঠিকাদার সংস্থা কোকড়াঝোড়ে ওই সংস্থার অফিসে গিয়ে জানতে পারেন, কম্বল সাপ্লাইয়ের ওই নথি পুরোপুরি জাল। অভিযোগকারী বার বার নবারুণ নায়েকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরপরই বিশ্বজিৎ দত্ত তমলুক থানায় এফআইআর করেন। তমলুক থানার আইসি সুভাষচন্দ্র ঘোষ বলেন, সস্ত্রীক নবারুণ নায়েক সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। অভিযোগকারী বেশকিছু নথি জমা করেছেন। আরও কিছু নথি চাওয়া হয়েছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদক নবারুণ নায়েক বলেন, আমি বিশ্বজিৎ দত্ত নামে কাউকে চিনি না।