কলকাতা

কলকাতায় শিশুর শরীরে জাদু! কেমো বন্ধ করতেই বেমালুম উধাও ক্যানসার, টিউমারও

চিকিৎসাবিজ্ঞানকে যেন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ছোট্ট মিনু। একইসঙ্গে মানবিকতার নতুন সংজ্ঞাও লিখেছে সে। মিনুর সবে দু’বছর বয়স। তার অভিভাবকের নাম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হ্যাঁ, এমনটাই লেখা রয়েছে তার জন্মের শংসাপত্রে। ঠিকানা, ওই হাসপাতালেরই পেডিয়াট্রিক বিভাগের ফিফ্থ ফ্লোরের একটি বেড। সুস্থ, ফুটফুটে এই শিশু এখন হাসপাতালের সকলের আদরের। বিস্ময়েরও বটে!হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জন্ম হয় মিনুর। জন্মানোর পরেই দেখা যায়, তার শরীরে রয়েছে এক বিশাল টিউমার। পেটের ভিতরে, পেছন দিকে থাকা সে টিউমার এতই বড়, যে তার শরীরের যা মোট ওজন, তার অর্ধেক ওজনই টিউমারের। এই অবস্থায় জন্মের পরেই চিন্তায় পড়ে যান চিকিৎসকরা। আলোচনা শুরু হয় অস্ত্রোপচারের।কিন্তু মুশকিল হয়, পরের দিন। চিকিৎসক-নার্সরা দেখেন, হাসপাতালের বেডে সদ্যোজাত শিশুটি একা পড়ে রয়েছে। কেউ নেই আশপাশে। খোঁজাখুঁজি চালিয়ে বোঝা যায়, শিশুটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তার মা। পুলিশে খবর দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যে নাম-ঠিকানা লেখা ছিল পরিবারের, সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সবই ভুয়ো। এর পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দায়িত্ব নেয় সদ্যোজাতর। তার নাম রাখা হয় মিনু। শংসাপত্রে লেখা হয়, ‘কেয়ার অফ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল’।এ সবের পাশাপাশিই, তার পেটের বিশাল টিউমারটি দ্রুত অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। পেডিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুকান্ত দাসের তত্ত্বাবধানে করা হয় জটিল অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের পরে বায়োপসি করে দেখা যায়, ওই টিউমারটিতে ম্যালিগন্যান্সি রয়েছে। সে আবার যেমন তেমন ম্যালিগন্যান্সি নয়। মস্তিষ্কে যে ক্যানসার হয়, সেই প্রকৃতির ক্যানসারের দু’ধরনের কোষ ওই একটি টিউমারে মেলে।চিকিৎসকদের কথায়, “এমন ক্যানসার বিরল থেকে বিরলতম। কোনও কেস স্টাডি পাওয়া যায়নি এমন ঘটনার। কলকাতা মেডিক্যালের প্যাথোলজি বিভাগের তরফে একটি বিশেষ রিপোর্ট লিখেও জমা দেওয়া হয় এই নিয়ে।”এ সবের মধ্যেই হাসপাতালেরই উদ্যোগে পালন করা হয় তার অন্নপ্রাশন। উৎসবে-আদরে মেতে ওঠেন চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাকর্মীরা।এর পরে মেডিক্যাল অঙ্কোলজি বিভাগে দেখানো হয় মিনুকে। শুরু করা হয় কেমোথেরাপি। কিন্তু চিকিৎসায় সাড়া দেওয়া দূরের কথা, ক্রমেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে একরত্তি মিনু। তখন সবে কয়েক মাস বয়স তার। চিকিৎসকরা প্রায় ধরেই নেন, এই ক্যানসার থেকে তাকে বাঁচানো কঠিন। এমন সময়ে এমআরআই করে ধরা পড়ে, তার পেটে আরও একটি টিউমার বড় হচ্ছে। সেটিও ম্যালিগন্যান্ট।