কলকাতা

এনআরসি আতঙ্ক: জন্মের শংসাপত্র চেয়ে হাসপাতালে লম্বা লাইন

কলকাতাঃ অসমের এনআরসি কাঁপন ধরিয়েছে গোটা দেশে। যতই ‘ভয় পাবেন না’ গোছের স্তোক শোনানো হোক না কেন, সাধারণ মানুষ সে কথায় সাহস জুটিয়ে উঠতে পারছেন না। তাই নাওয়া, খাওয়া ভুলে জন্মের শংসাপত্র জোগাড় করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে। রোজ জন্মের শংসাপত্র চেয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন বিভিন্ন বয়সি লোকজন। রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। একটাই আর্তি, ‘দয়া করে জন্মের শংসাপত্র দিন।’ কোনও কোনও হাসপাতালের লাইনে এতটাই ভিড় হচ্ছে, তা সামাল দিতে আসতে হচ্ছে পুলিশকে। এখন শিশু জন্মানোর পরই পরিবারের হাতে শংসাপত্র তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নথি সংগ্রহ করতে আর পুরসভার দরজায় কড়া নাড়তে হয় না। কিন্তু অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকে অদ্ভূত এক ছবি দেখা যাচ্ছে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলিতে। প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০টা জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। আর, তার মধ্যে নজরে আসছে বেশ কয়েকটি পুরনো আবেদনও। এ বিষয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এনআরসির আতঙ্ক মানুষের মধ্যে মারাত্মকভাবে দেখা যাচ্ছে। এমনও হচ্ছে, কেউ হয়তো আজ থেকে ৫০ কিংবা ৬০ বছর আগে জন্মেছেন। কিন্তু এখন জন্মের শংসাপত্র নেওয়ার জন্য আবেদন করছেন। ফলে রেজিস্ট্রেশন বিভাগে দিনকে দিন বাড়ছে ভিড়।’’ শুধু কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই নয়, এনআরএস, আরজিকর, এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ-সর্বত্রই এক ছবি। চুলে পাক ধরেছে, কাঁপা, কাঁপা গলায় কথা বলেন, তাঁরাও জন্মের শংসাপত্র চাইছেন।
হাওড়ার বাসিন্দা কমল গড়াই কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর জন্মের শংসাপত্র চেয়ে আবেদন করেছেন। জন্ম ১৯৬২ সালে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, এত পুরনো রেকর্ড তাদের কাছে নেই। তাই এই শংসাপত্র তাদের পক্ষে ইস্যু করাও সম্ভব নয়। অন্যদিকে বেলঘরিয়ার বাসিন্দা তন্ময় দাস ছেলের জন্মের শংসাপত্রের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছেলের বয়স ১৫। এই হাসপাতালেই জন্ম। পরিবারের বাকিরা ওপার বাংলার। তাঁদের সকলের কাগজপত্র রয়েছে। এবার ছেলেরটা হাতে পেয়ে গেলে শান্তি। এভাবেই প্রতিদিন কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ। জন্মের শংসাপত্র পেতে মরিয়া তাঁরা।