সপ্তাহ দু’য়েক আগের ঘটনা। ঠাকুরপুকুর বাজারে পরিচালকের গাড়ির বেপরোয়া গতির বলি হন এক পথচারী। কখনও মদ্যপ অবস্থায়, কখনও বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে জয়রাইডের নামে পুলিসের যাবতীয় বিধিনিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক শ্রেণির চালকের দৌরাত্ম্য চলছেই। এবার রাতের শহরে জয়রাইডের বলি হল এক নাবালক। জখম হয়েছে তার সঙ্গে থাকা আরও পাঁচজন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি অংশে এই ঘটনা ঘটে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত নাবালকের নাম শুভম দাস (১৬)। দুর্ঘটনার কবলে পড়া সেডান গাড়িটি চালাচ্ছিল রোহিত আগরওয়াল। শুভম বসেছিল তার পাশের আসনে। গাড়ির পিছনের সিটে ছিল আরও চার যাত্রী— রিও সরকার, জয় দাস, সায়ন দাস এবং সূর্য প্রধান। প্রত্যেকের বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। ঘটনাস্থলেই শুভমের মৃত্যু হয় বলে মনে করা হচ্ছে। চালক রোহিত সহ পাঁচ জখম কিশোরকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই পুলিশ রোহিতকে গ্রেপ্তার করে। বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিস সূত্রের খবর, ছ’জনই গার্ডেনরিচ থানার পাহাড়পুরের বাসিন্দা। প্রত্যেকে ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান। মাঝেমধ্যেই তারা এভাবে জয়রাইডে বের হতো বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে তারা এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল। ফেরার পথে, রাত সাড়ে দশটা নাগাদ গার্ডেনরিচ ফ্লাইওভারে ওঠে সেডান গাড়িটি। তারস্বরে বাজছিল গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম। রাতের ফাঁকা ফ্লাইওভারে বিপজ্জনক গতি তোলে রোহিত। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে খবর, ওই ফ্লাইওভারের স্পিড ক্যামেরায় দেখা যায়, দুর্ঘটনার আগে গাড়িটির গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার! ফ্লাইওভারের মাঝামাঝি একটি বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি সরাসরি উড়ালপুলের দেওয়ালে ধাক্কা মারে। পরপর কয়েকবার পাল্টি খেয়ে যায় ১৫ লাখি সেডান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, এতটাই গতি ছিল যে গাড়িটি পাল্টি খাওয়ার সময় রাস্তায় সঙ্গে ঘর্ষণে আগুনের ফুলকি বেরচ্ছে। প্রায় ৪০ ফুট দূরে ছিটকে যায় গাড়িটি। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ির নীচ থেকে তখন বেরিয়ে আসছে চাপ চাপ রক্ত। পিছনের আসন থেকে কোনওক্রমে বেরিয়ে আসে চারজন। তারাই রোহিতকে উদ্ধার করে। কিন্তু শুভমকে বার করে আনা সম্ভব হয়নি। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দক্ষিণ বন্দর থানা ও সাউথ ওয়েস্ট ট্রাফিক গার্ডের পুলিস। শুভমকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।


